তথ্য প্রবাহ অবাধ হলে দুর্নীতি হ্রাসে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে: উপাচার্য
খুবিতে সুশাসনে তথ্য অধিকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে ‘সুশাসনে তথ্য অধিকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনার গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি বলেন, তথ্য জানার অধিকার এখন বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত, চর্চিত ও গুরুত্বর্পূণ একটি বিষয় যা মানুষের মৌলিক অধিকার পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত, অনেক দেশেই সাংবিধানিকভাবে, এমনকি জাতিসংঘ স্বীকৃত বিষয়। তিনি বলেন, তথ্য প্রবাহ অবাধ হলে দুর্নীতি হ্রাসে তা কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। আবার মিথ্যা তথ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। এধরণের তথ্য সমাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করে। একইসাথে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ়করণের ক্ষেত্রেও তার ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রের গোপনীয়তা রক্ষা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য জনসংশ্লিষ্ট সকল সেবায় গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা মানেই সেখানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া বা অসৎ উদ্দেশ থাকা। তিনি বলেন এখনও আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ সঠিক তথ্যের অভাবে, জবাবদিহিতার অভাবে বিভিন্ন অফিসে সেবা নিতে যেয়ে আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির সম্মুখীন হন। উপাচার্য আরও বলেন, আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথেষ্ট স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তিনি তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করাসহ বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যুক্ত হয়ে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের পেশাগত জীবনে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাবে। তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে দেশের অভীষ্ট উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখবে, একইসাথে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
প্রধান আলোচক সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার প্রফেসর ড. গোলাম রহমান বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে জনগণের চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশের বিষয় যুক্ত রয়েছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের শাসন কার্যকর হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে সে সমাজে জনগণের মধ্যে হতাশা বেড়ে যায়। আমরা যা কিছু করতে চাই তার অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ। যে আইন জনকল্যাণে কাজে আসে না তাকে ভালো আইন বলা যায় না। তিনি বলেন আমাদের দেশের গণমাধ্যম এখনও পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আমাদের মতো হয়ে ওঠেনি। আমাদের গণমাধ্যম এখন একটি পরিবর্তন উন্মুখ অবস্থার মধ্যে বিরাজ করছে, যেখানে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। প্রিন্ট মিডিয়া ক্রমশ টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াও সামনে এমন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। গোটা বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিশেষ করে ইন্টারনেট মাধ্যম নতুন এক তথ্যদ্বার উন্মোচন করেছে, যেখানে তথ্য প্রবাহ একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করছে এবং তারাও তাদের মতামত শেয়ার করছে। এটা অন্য কোনো গণমাধ্যমে সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার বিষয়ে অবশ্যই একটি নীতিমালা বা আইন থাকা জরুরী বলে উল্লেখ করেন। তিনি পেশাজীবীত্বের মাধ্যমে গণমাধ্যমের উৎকর্ষ সাধনে এগিয়ে আসার জন্য নিয়োজিত সাংবাদিক তথা গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি কর্পোরেট কালচার ও গোষ্ঠী স্বার্থ নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে সত্যিকার অর্থে বস্তুনিষ্ঠ, বহুত্বচিন্তার প্রতিফলন, দেশ ও জাতির কাছে দায়বদ্ধ অভীষ্ট কল্যাণব্রত গণমাধ্যম কালচার প্রতিষ্ঠার প্রতিও তাগিদ দেন। সেক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার কয়েক হাজার গ্রাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের ভ‚মিকার কথা উল্লেখ করে নিকট ভবিষ্যতে গণমাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন প্রকৃতপক্ষে সুশাসনের জন্য তথ্য অধিকার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অবাধ তথ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠার জন্যও সহায়ক। পরে এক প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর মোছাঃ তাছলিমা খাতুন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের প্রভাষক মোঃ শরিফুল ইসলাম। সেমিনারে সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের বিভিন্ন ডিসিপ্লিন প্রধান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইন এবং ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের প্রায় তিনশত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশ নেন।