ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ক্রমশ খারাপের দিকে যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুনরায় ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা শিক্ষার্থীদের জানানো হবে।
ক্লাস-পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে সরকার ঘোষিত ‘সাধারণ ছুটির’ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
তবে জরুরি সেবা কার্যক্রম এই ছুটির আওতামুক্ত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ছুটির মধ্যে শিক্ষার্থীদের যার যার বাসায় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে পাঠক্রম অনুযায়ী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে এবং সীমিত পরিসর হলেও শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে ছুটি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছুটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু দেশে মহামারীর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হল।
এই পরিস্থিতিতে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে সবার মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখন অনলাইনে ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীরা কতটা মনোযোগী হবে সেটাও ভেবে দেখতে হবে।
“পাবলিক ইউনিভার্সিটির অনেকে বলছে, সব শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নাই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। আমরা বলেছি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে পারে।”
এই ক্ষতি সামলে উঠতে মঞ্জুরি কমিশন কোনো নির্দেশনা দেবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা বসব এবং কীভাবে এই গ্যাপটা পূরণ করা যায়, সেটা নিয়ে কথা বলব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে অবশ্যই সেশনজট হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের রিকভারি করার জন্য সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে নিতে হবে। সিলেবাস কমিয়ে এনে বা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।”
তবে আপাতত অনলাইনে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখা ‘সম্ভব নয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপ-উপাচার্য বলেন, “আমার জানা মতে থিসিসের স্টুডেন্টরা তাদের সুপারভাইজারদের কাছে স্টাডি নিয়ে ব্যস্ত আছে। তবে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে তো অনলাইনে আনা সম্ভব না। যারা নিচ্ছে, তারা ক্লাসের চেয়ে প্রচারই বেশি করছে।”
তার মতে, শিক্ষার্থীদের হাতে এখন যেহেতু প্রচুর সময়, তারা নিজেদের উদ্যোগেই পাঠ্যক্রম ও ব্যক্তিগত লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারে।
“স্কুলের বাচ্চাদের মত তো আর তাদের ক্লাস নিয়ে পড়া আদায় করা সম্ভব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যতটা সম্ভব, তারা নিজেরাই সেভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে থাকতে পারে।”