ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশি, সর্বোচ্চ সতর্ক পুলিশ
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীতে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ও নৈরাজ্যমূলক ঘটনা না ঘটে এবং পরিস্থিতি যাতে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক মিটিং করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দফতরে এ সংক্রান্ত একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে ঢাকার বিভিন্ন জোনের কর্মকর্তাদের নানা ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ডিএমপির একটি জোনের একজন এডিসি জানান, আগামী পাঁচ দিন তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে কারা উঠছেন, কারা যাচ্ছেন, কোন সড়কে কি ঘটছে- এসব নজরদারিতে রাখতে বলা হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি সড়কে বিশেষ করে রাতের বেলায় চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি তল্লাশি করতে বলা হয়েছে। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে গ্রেফতার করতেও বলা হয়েছে মৌখিক নির্দেশনায়।
রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত একটি মিটিংয়ে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমাবেশ ছাড়াও চলতি মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুলিশ কীভাবে নিরাপত্তা দেবে সে বিষয়েও সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপির একটি বিভাগের ডিসি জানান, বিএনপির সমাবেশ কেন্দ্র করে তাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। দিনরাত অভিযান চালাতেই ব্যস্ত তারা। বিশেষ করে আবাসিক হোটেলগুলোতে কোন ধরনের মানুষ আসছে তা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে কোন ধরনের আত্মীয়-স্বজন আসছে ও যাচ্ছে হচ্ছে সে দিকটিও খেয়াল রাখছেন। প্রতিটি বিভাগের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বলা হয়েছে।
ডিএমপির একাধিক থানার বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, আগামী ৯ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত গ্রেফতার অভিযান চলবে। সড়কপথে ঢাকায় আসা কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহজনক হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো চেকপোস্টগুলোতে কঠোর তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে আসা দূরপাল্লার বাসগুলোতে আসা যাত্রীদের নাম পরিচয় জানার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার ট্রাফিক বিভাগকে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো দিয়ে কত গাড়ি ঢুকছে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা সিসি ক্যামেরায় কোনো ধরনের অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা গেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানায় জানাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ডিএমপি পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত সাড়ে চার শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে তারা রোববার পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫০ এর অধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে, যাদের বেশিরভাগ বিএনপির নেতাকর্মী।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সারাদেশে সাড়ে সাত শতাধিক নেতাকর্মীর বাসা ও প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অধিকাংশ নেতকর্মীর নামে বিস্ফোরক ও নাশকতার মামলা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ডিসি জানান, শনিবার রাত থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। চলবে ১০ ডিসেম্বরের আগের রাত পর্যন্ত। আবাসিক হোটেলগুলোতে উঠে যাতে কোনোভাবে নাশকতার পরিকল্পনা করতে না পারে তা প্রতিরোধেই এই অভিযান।
যদিও শনিবার বনানীতে অভিযান শুরুর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, গুলশান ও বনানী এলাকায় থাকা আবাসিক হোটেলগুলোতে সম্প্রতি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেদিন রাতভর বনানী, গুলশান, তেজগাঁও, মতিঝিল এবং উত্তরা এলাকায় অভিযানে কোনো জঙ্গি ধরা পড়েনি।
এ ব্যাপারে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের এসি (মিডিয়া) ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অভিযান চলছে না। মূলত ডিসেম্বর মাস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই অভিযান ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্যরা কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার স্যার সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কমন যেসব নির্দেশনা সেগুলোই দেওয়া হয়েছে। অভিযান একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলমান থাকবে।