ঢাকার প্রবেশপথে জোরদার তল্লাশি
আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। চলছে মিছিল মিটিং। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীমুখী হতে শুরু করেছে দলটির কর্মী-সমর্থকরা। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি মহাসড়কেও রাখা হয়েছে কড়া নজরদারি।
তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও উত্তরা এলাকায়। রাজধানীমুখী সব যানবাহনের যাত্রীদের তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জেও বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ। সন্দেহ হলেই যানবাহনে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকায় আসা একাধিক বাসচালক ও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় প্রবেশের সবগুলো পথে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও। টহল বাড়ানো হয়েছে পুলিশের।
তবে পুলিশের দাবি— নাশকতার সতর্কতা হিসেবে রাজধানীতে প্রবেশের পথগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। হয়রানি নয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের প্রধান লক্ষ্য।
তবে সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, অপরাধীদের ধরতে গিয়ে সাধারণের হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির দাবি— অপরাধী ধরার নামে মামলার আসামি ধরার কথা বলে বিএনপিকে নেতা-কর্মী শূন্য করার কৌশল নিয়েছে পুলিশ।
রাজধানীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রবেশপথ কাঁচপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে আটকে তল্লাশি করছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী এলাকায় চেকপোস্টে ঢাকামুখী যাত্রীদের তল্লাশি ও জেরা করা হয়। যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি ও ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চায় পুলিশ। সন্দেহভাজন অনেককে বাস থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
সিলেট থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহন বাসের সুপারভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ তাদের গাড়ির যাত্রীদের তল্লাশি করেছে। অনেক যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; তারা কেন ঢাকায় যাচ্ছেন। দলবদ্ধ হয়ে কেউ বাসে যাত্রী হিসেবে উঠে ঢাকায় যাচ্ছেন কি না, তাদের কাছে এসব জানতে চেয়েছে পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একই অবস্থা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও। সেই মহাসড়কের আমিন বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশ মুখে গাবতলী এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেকপোস্টে বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল থামিয়ে চালক ও যাত্রীদের নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশ সদস্যরা। যাত্রীদের কাছে ঢাকায় আসার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে।
বুধবার রাতে আশুলিয়া থেকে ঢাকায় আসা আব্দুর রহিম নামের এক যাত্রী বলেন, রাত ৮টার দিকে ঢাকার আসার উদ্দেশে আশুলিয়া এলাকা থেকে সাভার পরিবহনের একটি বাসে উঠি। বাসে ওঠার পর হেমায়েতপুর পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু সাভার আসার পর বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। কারণ জানতে চাইলে বাস চালক বলেন; ঢাকার প্রবেশমুখে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। তাই ঢাকায় যাব না। পরে সেখান থেকে লেগুনা করে হেমায়েতপুর আসি। সেখান খেকে ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে করে গাবতলী আসি। তবে আসার পথে আমিন বাজার এলাকায় পুলিশ তল্লাশি করেছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশের তল্লাশির কারণে ওই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরে রাত ১টার দিকে বাসায় পৌঁছাই।
ঠিকানা বাসের চালক রহিম মিয়া বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন থেকে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে। তবে বুধবার নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনার পর বেশি কড়াকড়ি করা হয়েছে।
ডিএমপির দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, তার থানাধীন এলাকায় আগে থেকে চেকপোস্ট রয়েছে। ওই চেকপোস্ট দিয়ে ঢাকায় আসা গাড়িকে অনেক সময় তল্লাশি করা হয়। তবে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে একটু বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে