November 27, 2024
জাতীয়

ড্রেন পরিষ্কার রাখতে না পারলে আত্মহত্যা করেন : মন্ত্রী

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ঠিকমতো ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখতে না পারলে ‘আত্মহত্যা করতে’। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্মপন্থা নির্ধারণে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মন্ত্রী সিটি করপোরেশনের কর্মকাÐ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে ঢাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার বিষয়ে কথা উঠলে বৈঠকে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের কী জন্য রাখছি? যদি মনে করেন আমার দায়িত্ব যদিৃ যার ড্রেনে কাজ করার কথা, ইন্সপেকশন করার কথা, ভোর ৫টা বাজে উঠে মোটরসাইকেল নিয়ে দেখা দরকার কোথায় কোথায় সুইপাররা সুইপিং করেছে, কোথায় করে নাই, কোন খানে (ময়লা) জমা আছে। এটা যদি আপনার কাছে খারাপ লাগে, আমার কাছে খারাপ লাগে তাহলে ভাই কথা বলে কোনো লাভ নাই, তাহলে আত্মহত্যা করেন, এটাই সবচেয়ে ভালো।
ড্রেনে যারা ময়লা ফেলে তাদের জরিমানা করার নির্দেশ দিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ড্রেনে পলিথিন ফেলছে, এটা ফেলছে, ওটা ফেলছে, ব্যবস্থা নিন। আপনি যদি পানিশমেন্ট না দেন তাহলে পুরস্কারের কোনো দাম আছে? কালো যদি না থাকে তাহলে সুন্দরের কী দাম আছে? আপনাদের এটা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, এখানে বসে আমি যদি আপনাকে খুশি করার মতো কথা বলি তাহলে আমার এখানে বসাটা, আমার দায়িত্বটা আমি ঠিকভাবে পালন করছি না। সুন্দর করে কথা বললে যদি কাজ না হয়, তবে অসুন্দর করে কথা বলেন। করবে না কেন? সুইপারকে সাসপেন্ড করেন, পানিশমেন্ট দেন।ৃ মানবিক কারণে এসব করেন না, কিসের মানবিক ভাই? আপনারা কাজ করেন না, আমি মানবিক হব কেন? তাদের মাফ করা মানেই আপনি অপরাধীদের প্রশ্রয় দিলেন। কী কথাটা কি ঠিক আছে?
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের ইন্সপেক্টররা মাঠে আছে কি নেই ইউ হ্যাভ টু এনশিউর দিজ। কী করা যাবে? কী সাহেব, ঠিক আছে? এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, স্যার, আপনার কথা অত্যন্ত যৌক্তিক। প্রতিদিন যারা কাজ করছে আমাদের হোয়াটসআপ গ্রপে জানিয়ে দেয়, ছবিও সেখানে দেয়। আপনার কথায় আরও গুরুত্ব দেব, যারা কাজ করবে না সেগুলো।
কথা কেড়ে নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সবাই কি কাজ করছে?
জবাবে সচিব বলেন, সবাই কাজ করছে। কিন্তু সবাই এক রকম না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির পুরাতন ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন ইন্সপেক্টর আছে বলে মন্ত্রীকে জানান এই সিটির সচিব মোস্তফা। এরপর মন্ত্রী বলেন, তারা কি সার্ভিস দেওয়ার জন্য ক্যাপাবল? সব কাজ কি এদের দিয়ে করানো সম্ভব?
জবাবে সচিব বলেন, কষ্ট হয় স্যার।
এরপর মন্ত্রী জনবল বাড়ানোর পরামর্শ দিলে সচিব বলেন, অর্গানোগ্রামে আছে একটা ওয়ার্ডে একজন করে ইন্সপেক্টর। তখন মন্ত্রী বলেন, অর্গানোগ্রাম বদলান।
তখন সচিব বলেন, সেটা আমরা দেব, স্যার।
মন্ত্রী বলেন, আপনি যখন প্রবলেম ফেইস করছেন তাহলে করতে হবে। একজন মানুষের পক্ষে কয় ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব? একটা লোক যে কাজ করতে পারবে তাকে যদি তার ১০ গুণ বেশি দিয়ে রাখেন তাহলে তো কাজ করতে পারবে না। অতিরিক্ত লোকজনের ব্যবস্থা করেন। আউটসোর্সিং করেন।
এরপর সচিব বলেন, যাই করা হোক না কেন আপনাদের অনুমোদন নিয়েই করব।
সভার শেষ পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ মন্ত্রীকে বলেন, স্যার, বর্ষার আগেই সব ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখার সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন।
তখন মন্ত্রী বলেন, ওয়াসা ২৬টি খালের মধ্যে দুটি পরিষ্কার করেছে, বাকি ২৪টি এবার পরিষ্কার করবে। খালগুলো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ৩৯টির মধ্যে বাকিগুলো শর্টআউট করে কাজ করতে হবে। ড্রেনগুলো নিয়ে সিটি করপোরেশন সিরিয়াসলি কাজ করেন।
সভার পর আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ৩৯টি খালের অস্তিত্ব পেয়েছি। এর মধ্যে দুটি খনন করা হয়েছে, বাকি ২৪টি এবার খনন করা হবে। বাকিগুলো কীভাবে পারি এজন্য সভায় আলোচনা হয়েছে, উদ্যোগ নেওয়া হবে। ড্রেনেজ সিস্টেমের জন্য সিটি করপোরেশন স্ব স্ব অবস্থান থেকে তারা পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ করেছে বলে আজকের মিটিংয়ে অবহিত করেছে।
জলাবদ্ধতা নিয়ে অতীতে যে রকম দুঃখজনক রেকর্ড আছে বা তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে এবার তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে আমরা আশা করতেই পারি। আজকের মিটিংয়ে এ রকম একটি আলোচনার জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।
এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করছি। দুই সিটি করপোরেশন প্রয়োজনীয় পেস্টিসাইড মজুদ রেখেছে এবং মশক নিধন করার জন্য তাদের পক্ষ থেকে কাজ করছেন। আমি আশা করি, এটি আরও জোরদার হবে। এটাকে সহজভাবে দেখার দরকার নেই, সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে অতীতের মতো কোনো রকম তিক্ত কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের মোকাবেলা করতে না হয়। তবে সা¤প্রতিক সময়ে ঢাকায় মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এবার বর্ষা মওসুমে আবারও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটবে বলেই অনেকে আশঙ্কা করছেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *