ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ‘যুগান্তকারী’ : বিভাগীয় কমিশনার
দ: প্রতিবেদক
সরকারি চাকুরীতে নিয়োগের পূর্বে চাকুরীপ্রার্থী মাদকাসক্ত কিনা তা জানতে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। বর্তমানে কর্মরত সরকারি চাকুরীজীবীদেরও আগামীতে এ পরীক্ষার আওতায় আনা যেতে পারে। সমাজ ও পরিবারকে মাদকমুক্ত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন করা জরুরি। মনে রাখতে হবে সন্তান বড় হলে দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়।
খুলনায় গতকাল বুধবার মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসে প্রধান অতিথি বক্তৃতায় খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া এ কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সার্বিক বিষয়ে তত্ত¡াবধায়নে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুপ আলী। খুলনা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্বাস্থ্যেই সুবিচার, মাদক মুক্তির অঙ্গীকার’।
সভায় প্রধান অতিথি আরও বলেন, খুলনা বিভাগের চারটি জেলা নড়াইল, মগুরা, বাগেরহাট ও খুলনাকে শতভাগ মাদকমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকের ন্যয় অভিশাপ্ত বস্তুর সাথে যুক্ত না হতে সবাইকে পরামর্শ দেন। মাদকের ন্যয় নিকৃষ্ট বস্তুর প্রসার সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মাদকের অপব্যবহার কেবল যুবকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নারী, পুরুষ ও বয়স নির্বিশেষে অনেকেই মাদকের করাল গ্রাসে পতিত হচ্ছে। সন্তান মাদকাসক্ত হলে পরিবারের অর্থ-সম্পদ, সম্মান সব ধ্বংস হয়। এজন্য নিজের ও প্রতিবেশীর সন্তানদের সবসময় নিবিড় পর্যাবেক্ষণে রাখতে হবে। মাদকাসক্ত সন্তান নেশার টাকা না পেলে মা-বাবাকেও আক্রমণ করে শারীরিক নির্যাতন করতে দ্বিধা করে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমীন, র্যাব-৬ এর উপ-অধিনায়ক এস এম আলম, বিজিবি’র সহকারি পরিচালক এস এম তফসির, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবির এবং মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহাবুবার রহমান। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমান, সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যথাক্রমে মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন, মো: রাশেদুল ইসলাম, সেটু কুমার বড়ুয়া, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, বিভাগীয় জেলা তথ্য অফিস এর উপ-পরিচালক গাজী জাকির হোসেন, জেলা মার্কেটিং অফিসার মোঃ সালাম তরফদার, শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আবু আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে মাদকবিরোধী বিশেষ প্রতিবেদন করায় খুলনার স্থানীয় তিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টারকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরা হচ্ছে দৈনিক পূর্বাঞ্চলের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সুবীর কুমার রায়, দৈনিক প্রবাহ স্টাফ রিপোর্টার কামরুল হোসেন মনি ও সময়ের খবর এর নিজস্ব প্রতিবেদক সোহাগ দেওয়ান। এছাড়া রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাসহ বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিদের বিশেষ সম্মননা পুরষ্কার প্রদান করা হয়। এর আগে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে শহীদ হাদিস পার্ক থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। র্যালি ও আলোচনা সভায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা মহানগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে ছাত্রি-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে দিবসটি উপলক্ষে মানববন্ধন পালিত হয়।