ডেমরার দোলা-নুসরাত হত্যায় দুই আসামির ফাঁসির রায়
ঢাকার ডেমরা কোনাপাড়ায় স্কুলশিশু ফারিয়া আক্তার দোলা ও নুসরাত জাহানকে হত্যার দায়ে দুই আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।
এ মামলার দুই আসামি গোলাম মোস্তফা ও আজিজুল বাওয়ানীর উপস্থিতিতে ঢাকার তৃতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি রায়ে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জারিমানা করা হয়েছে বলে এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহমুদা আক্তার জানিয়েছেন।
দুই আসামির মধ্যে গোলাম মোস্তফা পেশায় একজন সিরামিক মিস্ত্রী। অপর আসামী আজিজুল বাওয়ানী তার ফুপাতো ভাই। তাদের দুজনের বয়সই ত্রিশের ঘরে।
হত্যার শিকার দুই শিশু ফারিয়া আক্তার দোলা (৭) ও নুসরাত জাহান (৫) ডেমরার কোনাপাড়ায় একটি নার্সারি স্কুলে পড়ত। কোনাপাড়ায় শাহজালাল রোডে পাশাপাশি দুটি বাসায় থাকত তারা।
২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি দুপুরে বাড়ির সামনে খেলার মধ্যেই নিখোঁজ হয় মেয়ে দুটি। তাদের খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হয়।
এরপর রাতে স্থানীয় আবুলের বাড়ির নিচতর ভাড়াটিয়া মোস্তফার বাসার খাটের নিচ থেকে মেয়ে দুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সেদিন মোস্তফাকে বাসায় না পেলেও তার স্ত্রী আঁখি ও শ্যালককে আটক করা হয়। তদন্তে নেমে পরদিনই মোস্তফা ও আজিজুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নুসরাতের বাবা পলাশ হাওলাদার ডেমরা থানায় মামলা করেন।
প্রথমে পুলিশের ধারণা ছিল, মুক্তিপণের জন্য হয়ত শিশু দুটিকে হত্যা করেছে আসামিরা। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বাড়ির বাইরে খেলতে থাকা নুসরাত আর দোলাকে ‘লিপস্টিক কিনে দেওয়ার প্রলোভন’ দেখিয়ে তারা বাসায় নিয়ে গিয়েছিল ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে।
ময়নাতদন্তে জানা যায়, দোলাকে ধর্ষণ ও নুসরাতকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়। পরে তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
৯ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মোস্তফা ও আজিজুল। তাতে বলা হয়, তারা দুজন ইয়াবার নেশা করে জোরে গান বাজিয়ে মেয়ে দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। দোলাকে ধর্ষণের পর নুসরাতকেও ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। তখন গলায় গামছা পেঁচিয়ে মেয়ে দুটিকে হত্যা করে খাটের নিচে লাশ রেখে তারা বেরিয়ে যায়।
হত্যাকাণ্ডের ১৬ দিনের মাথায় মোস্তফা ও আজিজুলকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সেখানে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১)/৯(৪)(খ) ধারায় একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, দুজনকে হত্যা ও আলামত নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়।
তৃতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের সাঁটলিপিকার গৌতম নন্দী জানান, ২০১৯ সালের ২৩ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক রায় ঘোষণা করলেন।