ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
অনলাইনে সাধারণ মানুষের ‘মতপ্রকাশের ওপর প্রতিবন্ধকতা’ তুলে নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ক্ষমতাধরদের জন্য ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে আইনটি বাতিল অথবা আন্তর্জাতিক মান ও মানবাধিকার আইনের অনুসরণে এটিকে সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
সোমবার (২৫ জুলাই) সংস্থাটির এক ব্রিফিংয়ে এই আহ্বান জানানো হয়।
‘নো স্পেস ফর ডিসেন্ট’ শীর্ষক এই ব্রিফিংয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সমালোচনা করায় ‘গুম, বিনা বিচারে আটক ও নির্যাতনের মতো নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার’ ১০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলার পর্যালোচনা করা হয়।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২০২১ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে এই আইনের অধীনে দায়ের হওয়া মামলায় কমপক্ষে ৪৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে; যাদের অধিকাংশকেই অনলাইনে ভুল এবং আক্রমণাত্মক তথ্য প্রকাশের অভিযোগে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যাদেরকে আইনটির টার্গেট বানানো হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, গায়ক, অ্যাক্টিভিস্ট, উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, এমনকি লেখাপড়া না জানা এক কৃষকও রয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় লেখক মুশতাক আহমেদ ১০ মাস কারাগারে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। আরেকজন কারাবন্দি অভিযোগ করেছেন তাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় কর্তৃপক্ষ যে ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তা থেকেই স্পষ্ট, বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো কিছুর প্রতিবাদ করা বা ভিন্নমত পোষণ কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের মত প্রকাশে এমন অন্যায্য বিধিনিষেধ আরোপ বাংলাদেশি সমাজের সর্বস্তরে ভয়ের বার্তা ছড়িয়েছে এবং স্বাধীন মিডিয়া ও সুশীল সমাজের কাজের পরিসরকে সংকুচিত করেছে। কেবল নিজেদের মতপ্রকাশের অধিকার চর্চার কারণে যেসব মানুষকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বন্দি করেছে তাদের অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এই আইন শুধু অনলাইনে একটি মন্তব্য করার কারণে যে কোনো জায়গায় অভিযান চালানো, ডিভাইস ও তাতে থাকা তথ্যাদি জব্দ করা এবং বিনা ওয়ারেন্টে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার মতো নির্বিচার ক্ষমতা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়েছে। এ ধরনের অনুশীলন ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) দ্বারা সুরক্ষিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন; যেখানে বাংলাদেশও একটি স্বাক্ষরকারী পক্ষ।
সাদ হাম্মাদি আরও বলেন, ‘জিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ যাবতীয় আইনকে আইসিসিপিআরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে ২০১৮ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য দেশের যেসব সুপারিশ তারা গ্রহণ করেছিলেন সেগুলোর বিষয়ে আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’