ডিআইজি মিজান কারাগারে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
অবৈধ সম্পদের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। হাই কোর্টের নির্দেশে গ্রেপ্তার ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
মিজানের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। রাষ্ট্রপক্ষে এর বিরোধিতা করেন মোশারফ হোসেন কাজল ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। দুদকের দায়ের করা এ মামলায় আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে সোমবার হাই কোর্টে গিয়েছিলেন আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তা।
কিন্তু বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চে জামিন নাকচ করে ডিআইজি মিজানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। তাকে পুলিশ হেফাজত রেখে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মহানগর বিশেষ জজ আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনারকে।
সে অনুযায়ী মিজানকে রাতে শাহবাগ থানায় রেখে মঙ্গলবার সকালে তাকে পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় নেওয়া হয়। পরে হাজির করা হয় জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েশের আদালতে। ডিআইজি মিজনের পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে তার আইনজীবীর কাছে বিচারক জানতে চান ওকালতনামা ছাড়া তিনি কীভাবে শুনানি করবেন।
আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী তখন বলেন, মিজানকে সোমবার হাই কোর্ট থেকে থানায় এবং সেখান থেকে সরাসরি আদালতে এনেছে পুলিশ। ফলে ওকালতনামায় তার সই নেওয়ার কোনো সুযোগ তিনি পাননি।
বিচারক এ সময় বলেন, থানা থেকেই ওকালতনামায় সই নেওয়া যেত। আইনজীবী সমাজী তখন বলেন, সেটা ঠিক হত না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশরফ হোসেন কাজলও তাতে সায় দেন। সমাজী তখন এজলাসেই আসামি মিজানের সই নেওয়ার অনুমতি চাইলে বিচারক তাতে সম্মতি দেন।
মিজানের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন, বিচারক এখনো আমলে নেননি। ফলে এ মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি হাকিম আদালতে হতে পারে, জজ আদালতে নয়। সুতরাং মামলার নথি হাকিম আদালতে পাঠাতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এর বিরোধিতা করে বলেন, গত ২০ মে দুদক বিধিমালায় যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তাতে দুদককে সরাসরি অভিযোগ বা এজাহার দায়ের করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেজন্য থানার সাহায্য লাগবে না। আর মামলার নথিপত্র সরাসরি জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পাঠাতে হবে। বিচারক তার কথায় সায় দিলে মিজানের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।
জামিন শুনানিতে আসামির আইনজীবী বলেন, এ মামলা হয়েছে দুদক আইন, মানি লন্ডারিং আইন এবং দণ্ডবিধিতে। ধারাগুলো জামিন অযোগ্য হলেও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারায় মিজান জামিন পেতে পারেন।
এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, যে ক্ষেত্রে বিশেষ আইনে মামলা হয় সেখানে সাধারণ আইনের বদলে বিশেষ আইন প্রাধান্য পায়। বিশেষ আাইনে এ মামলার অভিযোগ জামিন অযোগ্য।
এ বিষয়ে এক ঘণ্টার শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে ডিআইজি মিজানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানির সময় মিজান বসে ছিলেন বিচারপ্রার্থী ও আাইনজীবীদের আসনে। তার হাতে হাতকড়াও দেখা যায়নি।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছর জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ডিআইজি মিজানুর রহমানকে। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে থাকা এক দুদক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার কথা নিজেই ফাঁস করে দিয়ে স¤প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এরপর মিজান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা, ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান এবং ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকে আসামি করে গত ২৪ জুন এই মামলা দয়ের করেন দুদকের পরিচালক মনজুর মোরশেদ। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা -১ এ দায়ের করা এ মামলায় তিন কোটি সাত লাখ ৫ হাজার ২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
মনজুর মোরশেদের আবেদনে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ইতোমধ্যে ডিআইজি মিজানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছে। মামলা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।