ডিআইজি মিজানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের এবং ব্যাংকের হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ দুর্নীতি দমন কমিশনের পারমিশন মামলার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
ক্রোক আদেশের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, ৫৫ লাখ টাকার বেইলী রীটজ নামক ভবনের ৪র্থ তলার অ্যাপার্টমেন্টে একটি ফ্ল্যাট এবং কার পার্কিং স্পেসসহ ৫৫ দশমিক ৫১ অযুতাংশ জমি, কাকরাইলে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট, দোকান, জমি। যার মূল্য মোট ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬০ টাকা। আর ধানমন্ডি সিটি ব্যাংক লি. শাখায় ব্যাংক হিসাবে ১০ লাখ টাকা।
গতকাল বুধবার দুদকের পক্ষ থেকে আবেদনটি করা হয়। আবেদনে বলা হয়, ডিআইজি মিজান স্বনামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত ১৩ জুন দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি বৈধ আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ বিক্রি ও স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারার বিধান মতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনাকাঙ্খিত ফলাফল লাভ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ফলে বৈধ আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ/সম্পত্তি ক্রোক/ফ্রিজ করার প্রার্থণা করে দুদক।
বিচারক আদেশে উলেখ করেন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারার অধীন বর্ণিত অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিসমূহ এ মুহূর্তে ক্রোক করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। ফলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার সম্ভাবনা কম। ক্রোক করা সম্পত্তি যেন হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধের নিমিত্তে ঢাকা জেলা রেজিস্টার, নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ঢাকা রেজিস্টার কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্টার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), ধানমন্ডি/মো.পুর/গুলশান/সাভার/উত্তরাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
আর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের বিষয়ে আদেশে উলেখ করা হয়, ধানমিন্ড শাখা সিটি ব্যাং লি. এর ম্যানেজারকে হিসাবের ওপর অবরুদ্ধ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রাপ্ত অর্থ তার অবরুদ্ধ হিসেবে জমা করা যাবে কিন্তু কোন অবস্থাতেই উত্তোলন করা যাবে না।
উলেখ্য, ‘তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার!’ শিরোনামে গত বছরের ৭ জানুয়ারি একটি দৈনিক পত্রিকায় ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘এক সংবাদ পাঠিকার জীবনও বিষিয়ে তুলেছেন ডিআইজি মিজান’ শিরোনামে পর দিন ৮ জানুয়ারি আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে। পরে তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের খোঁজে নামে দুদক। অনুসন্ধান শেষে দুদকের পরিচালক গত ২৩ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, ৪ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকার সম্পদ ডিআইজি মিজানের দখলে রয়েছে।
এর মধ্যে তার নিজের নামে ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানের নামে তার নিজের সম্পদ রয়েছে ৯৫ লাখ ৯১ হাজার টাকার।