ডিআইজি মিজানের জামিন বহাল, ‘লিভ টু আপিল’ করবে দুদক
তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের দায়ে বিচারিক আদালতে তিন বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার আদালত।
জামিন স্থগিত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে সোমবার (১৮ এপ্রিল) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন।
এদিন আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। মিজানুর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি জানান, আপিল আবেদনের ওপর আজ ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন আদালত। আমরা ‘লিভ টু আপিল’ করবো।
গতকাল রোববার (১৭ এপ্রিল) ডিআইজি মিজানের জামিন স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে দুদক।
গত ১৩ এপ্রিল তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগের মামলায় মিজানুরকে দুই মাসের জামিন দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের একক বেঞ্চ। তবে হাইকোর্টে অপর একটি মামলায় জামিনের বিষয়ে রুল জারি পেন্ডিং থাকায় এখনই মুক্তি মিলছে না তার।
গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ডিআইজি মিজানের খালাস চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। এরপর ৬ এপ্রিল সেই আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে তিন বছর ও দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুস দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে আছেন। অপরদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি মিজান-বাছিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন। গত বছরের ১৮ মার্চ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার থাকাকালে বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। এছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়।
এরপর নারী নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে ডিআইজি মিজানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ওই বছরই ২৪ জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলার অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির।
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর এনামুল বাছিরকে সরিয়ে দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুস লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শেখ মো. ফানাফিল্যাকে প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তিন সদস্যের একটি দলকে।
গত বছরের ১৯ আগস্ট মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও বাদী দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে করা অপর এক মামলায় মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিচার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে চলছে।