ডা. মঈনের মৃত্যুতে প্রকাশিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল চিত্র: বাম জোট
সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্দশার চিত্র দেখিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
বুধবার জোটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “করোনায় ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যু প্রমাণ করেছে সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও পিপিই সরবরাহের দাবি বাগাড়ম্বর ছাড়া কিছু না।”
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল থেকে সিলেট শহরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় নিজের বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন ডা. মঈন।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৭ এপ্রিল রাতে তাকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিলেটে এই হাসপাতালেই কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে।
সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তার ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়ে। পরদিন বিকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে বুধবার সকাণে তার মৃত্যু ঘটে।
দেশে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া অর্শতের মধ্যে মঈনই একমাত্র চিকিৎসক।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বাম জোট বলছে, “দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রতি সরকারের অবহেলার কারণেই আজ করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে।
“এটি খুব দুর্ভাগ্য যে সিলেটের মতো বিভাগীয় শহরে একজন চিকিৎসককে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা দিতে না পারায় তাকে নিজ উদ্যোগে ঢাকায় এসে মৃত্যুবরণ করতে হল। এ ঘটনা দেশবাসীর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল চিত্র।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “করোনা প্রতিরোধে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না করে সরকার পোশাক রপ্তানি শিল্প ও অন্যান্য শিল্পে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, এতে সরকারের দৃষ্টি কোন দিকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।”
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ৬ চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্তের নিন্দাও জানান বাম জোটের নেতারা।
স্বাস্থ্য খাতে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ, পর্যাপ্ত কিট সংগ্রহ, দিনে কমপক্ষে প্রতি জেলায় ১ হাজার পরীক্ষা করা, আইসোলেশন সেন্টার ও চিকিৎসার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি, পর্যাপ্ত আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর জরুরি ভিত্তিতে স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতি দাতাদের মধ্যে রয়েছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংগতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
বিবৃতিতে তারা পোশাক শ্রমিকরা বকেয়া পরিশোধের দাবিও জানান। কর্মহীন মানুষের খাদ্য ও নগদ অর্থ দেওয়ার দাবিও জানান তারা।
ত্রাণ ও ওএমএসের চাল চুরির সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওএমএস চালুর দাবিও জানিয়েছে বাম জোট।