ডাকসু: ভোটের সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর চিন্তা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
হলে নিরাপত্তা নিয়ে নানা সংগঠনের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানোর চিন্তা চলছে। এই ভাবনার কথা জানানোর পাশাপাশি ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে স্থাপনে নিজেদের এখতিয়ার না থাকার কথাও জানিয়েছেন এই নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান।
তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর তা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তফসিল ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সার্বিক আয়োজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন অধ্যাপক মাহফুজ।
২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদগুলোর নির্বাচন। ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাদে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে। হলে কেন্দ্র হলে ভোটের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি করার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিএনপির বিভিন্ন নেতা। এই পরিস্থিতিতে হলে ভোটকেন্দ্র হলেও ব্যালট পেপার সকালে পাঠানোর একটি প্রস্তাব আসে নির্বাচন পরিচালনাকারীদের কাছে।
অধ্যাপক মাহফুজ বলেন, এই প্রস্তাবটা আমরা গ্রহণ করলাম। আমরা বিষয়টা নির্দিষ্ট করার জন্যই তো আলোচনাগুলো করেছি সবার সাথে। হলে ছাত্রলীগের ‘দখলদারিত্ব’ থাকায় অন্য সংগঠনগুলোর বাধাহীন প্রচার চালানো কিংবা শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার পরিবেশ নেই বলে ছাত্রদল ও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা দাবি করে আসছেন।
এই বিষয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা শিক্ষার্থী তারা নির্বিঘ্নেই হলে যাওয়া-আসা করছে, যাদের হলের অফিসে কাজ থাকে, তারা সেখানে যাচ্ছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সকল ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে ধরনের পরিবেশটা তৈরি করা।
একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমাদেরকে একটা গঠনতন্ত্র দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুসারেই নির্বাচন হবে। গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেট পাস করেছে। সেখানে ভোটকেন্দ্র হলেই রাখা হয়েছে। আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার কাজটুকু শুধু করব।
এদিকে, ভোটকেন্দ্র হল থেকে একাডেমিক ভবনে আনার দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটভুক্ত সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন। রেওয়াজ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই নির্বাচন পরিচালনা ও নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখভাল করবে বলে জানান অধ্যাপক মাহফুজ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটা সেনসিটিভ জায়গা। এটা পুলিশ কর্তৃপক্ষ যেমন জানে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জানে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তো পুলিশ হলে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে যে পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন আছে তবে তারা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কর্তৃত্বমূলক ভূমিকায় তারা যেতে পারবে না।
তফসিলে প্রচারের জন্য কম সময় রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের অভিযোগের বিষয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, তফসিলের ঘোষণার দিন সোমবার থেকেই প্রচারের সুযোগ থাকছে। আন-অফিশিয়ালি তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই তো প্রচার প্রচারণা চলছে এবং শিডিউল ঘোষণার পর তো আরও জোরেশোরেই চলবে। যে তারিখে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে নির্বাচনের জন্য কর্মকাণ্ড সেদিন থেকেই শুরু করা যাবে।
আমরা আচরণবিধিতে বলেছি, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের একদিন আগে শেষ হবে। কিন্তু শুরুটা কখন হবে আমরা সেটা বলি নাই। ফলে আমি মনে করি এই সময়টা যথেষ্ট।
ক্লাসরুমে প্রচার চালাতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির বিষয়ে অধ্যাপক মাহফুজ বলেন, আচরণবিধি তৈরির সময় অনুষদের ডিনরা এবং বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরা এ বিষয়ে নিজেদের আপত্তি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ক্যাম্পেইন তো হবে হল পর্যায়ে। কেউ চাইলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বাইরেও সভা-সমাবেশ করতে পারবে।
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রাখতে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এই সমস্যাটা এক দুই দিনের না, এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। এই সংস্কৃতিটা পরিবর্তনের দিকে আমাদের যেতে হবে। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেগুলোকে মেনে নিয়ে পরিবেশটা যাতে ঠিক থাকে আমাদের সেদিকে যেতে হবে।