January 2, 2025
জাতীয়

ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন ভিসি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নূরসহ তার সঙ্গীদের উপর হামলার সময় থেকে গায়েব ওই ভবনের সিসি টিভির ফুটেজ উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

গতকাল মঙ্গলবার অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধি দল সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাদের একথা জানান তিনি। গত রোববার ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপির কক্ষে নূর ও তার সঙ্গী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।

হামলাকারীরা যাওয়ার সময় ডাকসু ভবনের সিসি ক্যামেরার ধারণ করা চিত্র যে কম্পিউটারে ছিল, তার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য। ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় কয়েকটি প্রশ্নও তোলা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ জনসম্মুখে কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না- সেই প্রশ্ন তোলা হলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বের করার জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন তিনি। অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলটি স্মারকলিপিতে উপাচার্যকে আরও প্রশ্ন করেন-

‘রাষ্ট্রীয় তহবিলের বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে আপনি কেন সরকার দলীয় কর্মকর্তার মতো আচরণ করছেন? আপনি দিন দিন শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কাজ করছেন কেন? আমাদের সন্তানদের সাথে কেন অশিক্ষকসুলভ আচরণ করছেন? শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করে কেন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছেন না? হামলার পর কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না? প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিটি পড়ে শোনান লেখক ও শিক্ষা আন্দোলনকর্মী রাখাল রাহা।

এতে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কতিপয় শিক্ষার্থীদের মা-বাবা, অভিভাবক,  প্রাক্তন ছাত্র, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক,  আইনজীবী তথা রাষ্ট্রের কর প্রদানকারী নাগরিকবৃন্দ উদ্বেগের সাথে বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা হরহামেশাই বিভিন্ন প্রকার নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

কিন্তু তারা আপনার কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। আপনার পক্ষপাতমূলক, অমানবিক আচরণে আমরা হতবাক, বিমর্ষ এবং উদ্বিগ্ন। আপনার এই আচরণ অপরাধীদের অপরাধ করতে ধারাবাহিকভাবে উস্কানি দিচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, স¤প্রতি বিশ্ববদ্যালয়ের ইতিহাসের সকল নজির ভঙ্গ করে ডাকসু ভবনের ভেতরে ঢুকে আলো নিভিয়ে ডাকসুর ভিপিসহ অন্তত ৩০ জন ছাত্রকর্মীকে এমন নৃশংস কায়দায় মারধর করা হয়েছে, যার পরিণতিতে অন্তত দুই জন ছাত্র এখনও আইসিইউতে। আক্রান্ত ছাত্ররা আপনার প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়ে বহিষ্কারের হুমকির শিকার হয়েছেন। অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, আপনি তার একটারও সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করেছেন বলে আমরা দেখতে পাইনি।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন শিল্পী শহীদুল আলম, আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান, রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

উপাচার্য প্রতিনিধি দলকে বলেন, আপনাদের এই বার্তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহায়তা করবে৷ অভিভাবকরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ৷ আপনাদের কথা শোনা আমাদের প্রয়োজন৷ একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, যেটি প্রত্যাশিত ছিল না৷ যারা অপরাধী তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। নূরদের উপর হামলার ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় একটি কমিটি গঠন করেছে।

উপাচার্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা সবার জায়গা থেকে যেন দায়িত্বশীল আচরণ করি। আমরা যেন নিয়ম-নীতি ও মূল্যবোধের মধ্যে থাকি।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *