December 26, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ডাকসু নির্বাচনের বাধা কাটল

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
আইনি জটিলতার বাধা কেটে যাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (ডাকসু) পথ আবারও সুগম হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে আদালতের একটি রায় ঢাবি কতৃপক্ষের আবেদনে স্থগিত রেখেছিল চেম্বর আদালত। রোববার শুনানি শেষে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আপিল বিভাগ।
ফলে আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ১৫ মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে কতৃপক্ষ কে। গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ছয় মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার জন্য রায় দেয় হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে মর্মে চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানোর পর অবমাননার আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয় সংশি­ষ্ট বেঞ্চ।
এরপর গত ১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ওই দিনই চেম্বার আদালত হাই কোর্টের আদেশটি স্থগিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনটি শুনানির জন্য ১১ অক্টোবর দিন ধার্য্য করে দেয়।
রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে ওই আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ তুলে নেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ১৫ মার্চের মধ্যে যেহেতু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত আছে, ফলে এই আবেদনটি আর শুনানির প্রয়োজন নেই।
মনজিল মোরশেদ বলেন, যেহেতু সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে এবং আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত আছে ফলে হাই কোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার আদালতের আদেশ তুলে নেওয়া হোক। এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ চেম্বারের ওই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। ফলে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো আইনি বাধা থাকছে না বলে জানিয়েছেন মনজিল মোরশেদ।
ডাকসু নির্বাচনের পদক্ষেপ হিসাবে গত নভেম্বরে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি হলের ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থীর নাম ও তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ছাত্রী আছেন ১৪ হাজার ৫০৯ জন, আর ছাত্র ২৩ হাজার ৯৮৪ জন।
দুই যুগ ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় প্রশাসনকে বাধ্য করতে ২০১২ সালে এই রিট আবেদন করেছিলেন ২৫ শিক্ষার্থী। চলমান আইনি প্রক্রিয়া সেই রিট আবেদনেরই ধারাবাহিকতা। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। প্রথমে পরোক্ষ নির্বাচন হলেও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ভোটে ডাকসু নির্বাচন শুরু হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর।
ভাষা আন্দোলন,শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসু এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন সামনের কাতারে।স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে নির্বাচন হয়নি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *