ট্রেনের ছাদের যাত্রীরাও পেলেন মন্ত্রীর শুভেচ্ছা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষিদ্ধ; কিন্তু ঈদের সময় ভিড় বেড়ে যাওয়ায় বারণ না শুনেই অনেকেই ছাদে উঠে পড়েন। ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠে বসা এই যাত্রীদের না নামিয়ে বৃহস্পতিবার শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেল রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে যান মন্ত্রী; তার সঙ্গে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস তখন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে রওনা হচ্ছিল। ট্রেনটির ছাদেও এসময় শুয়ে-বসে ছিলেন অনেক মানুষ। মন্ত্রী হাতে উঁচিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
একদিন আগেই রেল পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. মহসিন হোসেন কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনের সময় বলেছিলেন, কোনো যাত্রী যাতে ট্রেনের ছাদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে না ওঠেন, সেই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ আছেন। কিন্তু মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময়ও সেই ‘সজাগ’ থাকার কোনো নমুনা দেখা যায়নি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে করে যাত্রীদের যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, এসব লোকদের নামিয়ে দিলেই কি সমস্যার সমাধান করতে পারবো? সব সময় ইচ্ছা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা যাত্রীদের ছাদ থেকে নামিয়ে দিতে পারি না।
তবে ট্রেনের ছাদে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় যে মন্ত্রণালয়ের উপরই পড়বে, তা স্বীকার করে নেন মন্ত্রী। এই সমস্যা সমাধানে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেওয়ার আহŸানও জানান তিনি। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে কোরবানির ঈদের ছুটি শুক্রবার থেকেই শুরু হওয়ায় এদিন কমলাপুরে ছিলে ব্যাপক ভিড়। তবে পশ্চিম রেলের অধিকাংশ ট্রেন আগের মতোই দেরি করে ছাড়ছে বলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি। একতা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় থাকলেও এটি দেড় ঘণ্টা দেরি করে সাড়ে ১১টায় ছেড়ে যায়। মন্ত্রীর সামনেই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গাড়িটির জানালা দিয়েও যাত্রীরা উঠছিলেন।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট দেরি করে ছাড়ে। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও এটি ৫ ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ট্রেনটি সাড়ে ৪ ঘণ্টা দেরি করে দুপুর সাড়ে ১২ টায় ছেড়ে যায়। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলে এটি ছাড়তে সাড়ে ৫ ঘণ্টা দেরি হবে বলে রেলের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান।
রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস দুপুর সোয়া ১ টার পরিবর্তে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি করে ছাড়বে। আর রাজশাহীগামী সিল্কসিটি দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় থাকলে এটি অন্তত ৩ ঘণ্টা, রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটি ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা এবং খুলনাগামী চিত্রা সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্তে অন্তত সাড়ে ৩ ঘণ্টা দেরি করে ছেড়ে যাবে বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে পূর্ব রেলের চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানান রেলমন্ত্রী সুজন। ট্রেন যথা সময়ে ছাড়তে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করে যেতে হয়। এই সেতু দিয়ে প্রতিটি ট্রেন অতিক্রম করতে ৩০/৪০ মিনিট সময় লাগে, প্রতিদিন ৩২টি ট্রেন এর ওপর দিয়ে চলাচল করে থাকে। সেই হিসেবে ট্রেনের সময় সূচি আর ঠিক রাখা যাচ্ছে না। যমুনার উপর ২০২৩ সালের মধ্যে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ হলে এই সমস্যার সমাধান হবে, বলেন তিনি।
মন্ত্রীকে স্টেশনে পেয়ে রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন প্রশ্ন করেন, সকালের ট্রেন বিকালে কেন? জবাবে মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর দিয়ে ধীরে ট্রেন চলাচলের কারণ দেখান।
একতা ট্রেনের যাত্রী মাসুম পারভেজ মন্ত্রীকে বলেন, আপনাদের সার্ভিস ভালো না, ভিড়ের কারণে ট্রেনের ভেতরে মানুষ দাঁড়ানোরও সুযোগ নেই। ছাদে কেন মানুষ উঠেছে? মন্ত্রী তখন বলেন, ঈদ উপলক্ষে একটু এমনই হয়ে থাকে, তবে আগামীতে চেষ্টা থাকবে যেন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে না যায়।
একই ট্রেনের যাত্রী সেন্টু ফরাজী মন্ত্রীকে পেয়ে অভিযোগ করেন, ৩৬ ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করে টিকেট পেয়েছি, এখন ট্রেনে উঠে সিটে বসার কোনো উপায় নেই। বহু কষ্ট করে সিট পেলাম। এই সমস্যা শেষ কখন হবে?
মন্ত্রী তখন বলেন, অতীতে ট্রেনের সার্ভিস আরও খারাপ ছিল, অনেক কিছুই ট্রেনের ছিল না। এখন ট্রেনের অনেক উন্নতি হয়েছে, ভবিষতেও আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
বিদেশ থেকে আরও ২০০টি বগি আনা হচ্ছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে রেলে আরও ১০টি নতুন ট্রেন যুক্ত হচ্ছে। এদিকে কমলাপুর থেকে কোনো ট্রেনে মশা নিরোধক কোনো ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি।