ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা রজার স্টোনের ৪০ মাসের জেল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে হওয়া তদন্তে আইনপ্রণেতাদের মিথ্যা বলা, তাদের কাজে বাধা দেওয়া এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করার দায়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা রজার স্টোনকে ৪০ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।
এসব অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন স্টোন। বৃহস্পতিবার বিচারক অ্যামি বারম্যান জ্যাকসনের সাজার মেয়াদ জানান।
কারাদণ্ডের পর স্টোনকে দুই বছর নজরদারির মধ্যেও থাকতে হবে; বিচারক তাকে ২০ হাজার ডলার জরিমানা এবং ২৫০ ঘণ্টার ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিক শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সন্দেহভাজন আঁতাত নিয়ে তদন্তে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের মধ্যে স্টোন ষষ্ঠ।
৬৭ বছর বয়সী এ রিপাবলিকান উইকিলিকসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটিকে মিথ্যা বলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কূটনৈতিক ও সামরিক নথি ফাঁস করে দিয়ে আলোড়ন তোলা ওয়েবসাইট উইকিলিকস ২০১৬ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়া ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কিছু ইমেইল ফাঁস করে দিয়েছিল।
‘বিধ্বংসী’ ওই ইমেইল ফাঁসের ঘটনা ট্রাম্পের জয়ে ভূমিকা রেখেছিল বলে অনুমান অনেকের।
হিলারির ওই ইমেইলগুলো রুশ হ্যাকাররা চুরি করেছিল বলে ভাষ্য মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের।
বৃহস্পতিবারের রায় হলেও স্টোনকে এখনই জেলে যেতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। তার আইনজীবীদের করা একটি আপিল আবেদনের সুরাহার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নভেম্বরে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিচার বিভাগের কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের সাবেক এ উপদেষ্টাকে ৭ থেকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। বিচারক জ্যাকসন তাতে সাড়া না দিয়ে সোয়া তিন বছরের সাজা দেন।
রায় দেওয়ার সময় বক্তব্যে বিচারক বলেন, স্টোন তাকে হুমকি দিয়েছিলেন ও ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন।
“এটা আইনের শাসনের ক্ষেত্রে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আদালত এসব ক্ষেত্রে চুপ করে বসে থাকতে এবং ‘রজার রজারের মতো আচরণ করেছে’ এমনটা বলতে পারে না,” বলেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য স্টোনের বিচার হয়নি, বিচার হয়েছে প্রেসিডেন্টের কাজকর্ম ঢেকে ফেলার জন্য, বলেছেন এ নারী।
স্টোনের বিরুদ্ধে মামলায় মার্কিন বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপকেও ‘অভূতপূর্ব’ বলে অ্যাখ্যা দেন তিনি।
গত সপ্তাহে কৌঁসুলিরা সাবেক উপদেষ্টার ৭ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত সাজা চাওয়ার পরপরই ট্রাম্প একে ‘বিচ্ছিরি ও অন্যায্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।
তাৎক্ষণিকভাবে বিচার বিভাগও জানায়, স্টোন এমন সাজা পেলে তারা তা কমানোর পদক্ষেপ নেবে।
এ ঘোষণার পর বাদীপক্ষের ৪ কোঁসুলির সবাই পদত্যাগ করেন। একজন এমনকী বিচার বিভাগও ছেড়ে দেন।
বৃহস্পতিবার রায়ের পরও ট্রাম্প তার সাবেক উপদেষ্টার পক্ষ নিয়েছেন। তবে এখনই স্টোনকে ক্ষমা করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও ইঙ্গিত দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
“রজারকে মুক্তি দিতে পছন্দ করবো আমি। এটি ঘটতে দেখলেও আনন্দিত হবো। কেননা, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার প্রতি অবিচার হয়েছে,” নেভাদার লাস ভেগাসে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন তিনি।