টেকনাফে ক্যাপসুল খেয়ে ঢাকায় বের হলো ইয়াবা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
টেকনাফে দুই কিশোর মো. জসিম (১৩) ও মো. শাহাজাহানকে (১৪) কৌশলে খাওয়ানো হয়েছিল ক্যাপসুল। টেপ দিয়ে পেঁচানো ক্যাপসুল শুধু রাজধানীর মিরপুরে পৌঁছাতে পারলেই পাবে মোটা অঙ্কের টাকা। তবে ঝুঁকি নিয়ে ওই বিশেষ ক্যাপসুল পেটে করে এনেও পার পায়নি তারা। মিরপুর এলাকায় এসে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হলো।
ইয়াবার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও যথারীতি অস্বীকার করে কিশোর শাহজাহান। তবে জসিমের বরাতে উঠে আসে ক্যাপসুল খাওয়ার কথা। এরপর এক্সরে করে মেলে টেপ পেঁচানো ক্যাপসুল। পরে বিশেষ কসরতে পেট থেকে বের করা হয় ওই ক্যাপসুল। দু’জনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় সাড়ে ৪ হাজার ইয়াবা। পরে তাদের দেয়া তথ্যে কেরানীগঞ্জের একটি বাসা থেকে আরও ২৫ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের দুটি টিম রাজধানীর শাহ আলী ও মিরপুর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আরও ৬ জনকে আটক করা হয়। কিশোর জসিম ও শাহজাহান ছাড়াও আটক অন্যরা হলেন লোকমান হোসেন, মো. রঞ্জু, শাহিদা বেগম, ইউনুছ মিয়া, মোছা. শাহনাজ বেগম ও মারিয়া আক্তার রিনা।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি ওবায়দুর রহমান জানান, গত বছর থেকে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান জোরদার হওয়ার পর কৌশলও বদলে ফেলে কারবারিরা। নতুন কৌশল হিসেবে বেছে নেয় পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচার। ওই কৌশলেই পাকস্থলীতে করে টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসছিল জসিম ও শাহজাহান। আগে থেকে তথ্য পাওয়ায় দারুসসালাম থানাধীন এলাকায় অবস্থান নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাদের আটক করা হয়।
কিশোর জসিম ও শাহজাহান টেকনাফ থেকে ইয়াবা পেটে করে নিয়ে আসে। ৫০ থেকে ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট একসঙ্গে করে ক্যাপসুল বানানো হয়। অতঃপর ৫০-৬০টি ক্যাপসুল খেয়ে পেটে করে পাচার করে ঢাকায় নিয়ে আসে।
গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরে ইয়াবা সরবরাহ করার সময় লোকমান ও রঞ্জু নামে দুজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ দু’জনের তথ্যে ওই দুই কিশোরকে আটক করা হয়।
এদের মধ্যে লোকমানের দায়িত্ব ছিল ইয়াবা বাহকদের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে বিশেষ একটি সিরাপ খাইয়ে ইয়াবা বের করে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা। আর রঞ্জুর দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন স্পটে ইয়াবা পৌঁছানো। লোকমান ও রঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে কাগজের কার্টন থেকে উদ্ধার করা হয় ২৫ হাজার পিস ইয়াবা। এ চক্রের মূলহোতা স্বপন নামে এক ব্যক্তি। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে ধরতেও চলছে অভিযান।
গোয়েন্দা উত্তর বিভাগে সহকারী কমিশনার (এসি) সুমন কান্তি দাস জানান, কক্সবাজার টেকনাফ থেকে রাজধানীতে ইয়াবা আনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। এরচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে ওই শিশুদের প্রলোভনে ফেলে পাকস্থলীতে করে টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে পাচার করা হচ্ছে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে।
তিনি জানান, একজনের পেটে প্রায় ২-৩ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বহন করে থাকে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও তারা কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের কার্টনের লেয়ারের মধ্যে বিশেষ কৌশলে ইয়াবা ট্যাবলেট ঢুকিয়ে পাঠায়। গ্রেফতাররা দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার থেকে অভিনব কায়দায় বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ঢাকায় এনে বিক্রি করে আসছিল।
দুই কিশোরের পাকস্থলী এক্স-রে করার পর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পুলিশ সুপার ডা. এম ইমদাদুল হক বলেন, ‘ওই দুই কিশোরের পাকস্থলী এক্স-রে করে দেখা গেছে, পাকস্থলীতে অনেকগুলো ট্যাবলেট। যা আল্টিমেটলি নিচের দিকে চলে যাবে। এভাবে ইয়াবা পাচারে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি খুবই বেশি।’
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকা কেন্দ্রীক বিপনন ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে পেরেছি। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে ইয়াবা বহনকারী দুই কিশোরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও চট্টগ্রামের মূল ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা যায়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পুলিশের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করে তাদেরকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’