টাকার লোভে চীনা নাগরিককে খুন করে দুই নিরাপত্তাকর্মী : পুলিশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকার বনানীর বাড়িতে চীনা নাগরিক গাউজিয়ান হুই হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই নিরাপত্তাকর্মীকে দায়ী করে পুলিশ বলছে, হত্যার পর তার বাসা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে পালায় তারা। আগের রাতে আব্দুর রউফ (২৬) ও এনামুল হক (২৭) নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন একথা জানান।
তারা সুবাস্তু হাউজিং কোম্পানির বিভিন্ন ভবনে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। গত বুধবার বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর ভবনের পাশ থেকে চলিশোর্ধ্ব গাউজিয়ান হুইয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি দশ তলা ওই ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।
দুই নিরাপত্তারক্ষী শুধু অর্থের লোভেই চীনা নাগরিককে হত্যার করেছে দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, তিন দিন আগে একবার উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর রউফ ও এনামুল ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আবারও তারা গাউজিয়ানের বাসায় গিলে কলিং বেল চাপেন। চীনা ব্যবসায়ী দরজা খুললে তারা বাসার কাজের মেয়ের বিষয়ে কথা বলতে চায়।
গাউজিয়ান বাসার একটু ভেতরে গেলে রউফ পেছন থেকে তার গলায় গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে এবং এনামুল তাকে জাপটে ধরে। চীনা ব্যবসায়ী দুজনকে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। গাউজিয়ান রউফের বাম হাতের আঙ্গুলে কামড় দেয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর নিস্তেজ হয়ে যান চীনা ব্যবসায়ী।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বাতেন বলেন, পরে এ দুজন একটি ব্যাগের ভেতরে থাকা সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। টাকা ভাগাভাগির পর এনামুল আরেকটি বাড়িতে তার দায়িত্বে চলে যায়।
আর রউফ ওই বাড়িতে গিয়ে নতুন ডিউটিতে আসা অপর এক নিরাপত্তাকর্মী জয়নন্দকে বিষয়টি জানিয়ে সহায়তা চায়। কিন্তু জয়নন্দ রাজি না হলে রাত ১১টার দিকে রউফ একাই চীনা নাগরিকের মৃতদেহ লিফট দিয়ে নামিয়ে বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে পুতে রাখে। এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, অল্প সময়ের মধ্যে সম্পদশালী হওয়ার মানসে তারা এই কাজটি করেছিল বলে স্বীকার করেছে।
পায়রা বন্দর ও পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে পাথর সরবরাহের কাজে যুক্ত ছিলেন ব্যবসায়ী গাউজিয়ান। তিনি সব সময় নগদ টাকা সঙ্গে রাখতেন, বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে লেনদেন করতেন। বিষয়টি এনামুল এবং রউফ বেশ কিছুদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সুভাস্তু হাউসিং কোম্পানির ঢাকা শহরে একাধিক ভবন আছে এসব ভবনে নিরাপত্তার জন্য তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। তারাই পালাক্রমে একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনে দায়িত্ব পালন করে। ওই বাড়িতে রউফ একমাস ও এনামুল ১৫ দিন ধরে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
এই হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সব বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যবসায়ী বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি; তার সাথে অন্য কারো সম্পর্ক আছে কিনা- এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি। সব তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাউজিয়ান হুইর লাশ উদ্ধারের পর তার বন্ধু জাঙ শান-হং ১১ ডিসেম্বর রাতে বনানী থানায় গিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই সময় গাউজিয়ান হুইর বাড়ি থেকে তার গাড়ি চালকসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হলেও তাদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
এদিকে বুধবারই গ্রেপ্তার রউফ ও এনামুলকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক। ঢাকার মহানগর হাকিম তোফাজ্জেল হোসেন শুনানি শেষে চার দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।
বাতেন বলেন, প্রথম দিন থেকেই এ দুজন ‘খুব কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা’ করেছিল। কিন্তু তারা না পালিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে তারা ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত নন। মামলায় আরেক নিরাপত্তাকর্মী জয়নন্দকে আসামি না সাক্ষী করা করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান। এসময় দুই সন্তান সঙ্গে নিয়ে চীনা ব্যবসায়ীর স্ত্রী, কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ও চীনা দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি উপস্থিত ছিলেন।