টাইব্রেকারে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে শেষ আটে সুইজারল্যান্ড
কী একটা রাত গেল ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে! গোল উৎসব আর নাটকে পরিপূর্ণ দুই ম্যাচ উপভোগ করলেন ফুটবলপ্রেমীরা। প্রথম ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ৩-৩ গোলে ড্র থাকার পর ৫-৩ ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে নাম লিখিয়েছে স্পেন।
পরের ম্যাচটিতেও প্রায় একইরকম চিত্রনাট্য, তবে নাটকীয়তা যেন আরও বেশি। ফ্রান্স একটা সময় ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে ৩-৩ সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
কিন্তু অতিরিক্ত সময়েও সমতা কাটানো গেল না। ফলে ভাগ্য নির্ধারণ গড়ায় পেনাল্টি শ্যুটআউটে। যাতে ৫-৪ ব্যবধানের জয় নিয়ে শেষ হাসি হেসেছে সুইজারল্যান্ড। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বিদায় করে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়েছে তারা।
বুখারেস্টের ন্যাশনাল এরেনায় নাটকের পর নাটক হয়েছে। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে করিম বেনজেমার দুই মিনিটের দুই গোলে এগিয়ে যায় তারা। পরে ব্যবধান ৩-১ করে জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন পল পগবা।
কিন্তু নাটক তো তখন আরও বাকি! নির্ধারিত সময়ের শেষ ৯ মিনিটে দুই গোল করে অবিশ্বাস্যভাবে ৩-৩ সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড। ম্যাচটা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শ্যুটআউটই গড়েছে ম্যাচের ভাগ্য।
শট শুরু হয় সুইজারল্যান্ডকে দিয়ে। পেনাল্টিতেও প্রথম চার শটে ছিল সমতা। পঞ্চম শটে সুইসদের পক্ষে গোল করেন মেহমেদি। কিন্তু পারেননি ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপে। তার জোড়ালো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমার। ওই এক ঝাঁপেই সব শেষ ফ্রান্সের।
ম্যাচ শুরু হতে না হতেই ১৫ মিনিটের মাথায় গোল হজম করেছিল ফ্রান্স। বক্সের বাঁ দিক থেকে সুইজারল্যান্ডের স্টিভেন জুবেরের উঁচু ক্রসের বল লাফিয়ে উঠে দারুণ হেডে জালে জড়ান হ্যারিস সেফারোভিচ। ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস বাঁ দিকে ডাইভ দিলেও নাগাল পাননি বলের।
পিছিয়ে পড়া ফ্রান্স এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। বেশিরভাগই কিলিয়ান এমবাপের পায়ে গিয়েছিল, কিন্তু ফরাসি স্ট্রাইকার সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি।
২৯ মিনিটে সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনাটি নষ্ট হয় ফ্রান্সের। আদ্রিয়ান র্যাবিওটের বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেয়া বুলেট গতির শট একটুর জন্য পোস্টের ডানদিক ঘেঁষে চলে যায়।
ফলে প্রথমার্ধে বল ৫৪ ভাগ বল দখলে রেখে ৭টি শট নিলেও (লক্ষ্যে একটিও নয়) গোলের দেখা পায়নি ফ্রান্স। অন্যদিকে ৪ শটের একটিকে গোলে পরিণত করা সুইজারল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ফের সর্বনাশ হতে যাচ্ছিল ফ্রান্সের। ৫১ মিনিটে সুইস মিডফিল্ডার জুবেরকে পেনাল্টি এরিয়ায় পা দিয়ে আটকে ফেলে দিয়েছিলেন বেঞ্জামিন পাভার্ড।
অনেকটা সময় পর ভারের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। কিন্তু রিকার্ডো রদ্রিগেজের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে আটকে দেন ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস।
পেনাল্টিতে গোল বেঁচে যাওয়ার পরই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ফ্রান্স। ৫৭ মিনিটে এমবাপের পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে সমতা ফেরান বেনজেমা। দুই মিনিটের মাথায় বক্সের ডানপাশে বল পেয়ে ক্লোজ রেঞ্জ থেকে হেডে আরও এক গোল তার।
এরপর ৭৫ মিনিটে চোখ ধাঁধানো শটে ব্যবধান ৩-১ করেন পল পগবা। বক্সের বেশ বাইরে থেকে বুলেট গতির এক বাঁকানো শটে পোস্টের ওপরের কোণ দিয়ে বল পার করেন ফরাসি মিডফিল্ডার। সুইস গোলরক্ষক বলের লাইনে ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি।
এর ছয় মিনিট পরই এক গোল শোধ করে সুইজারল্যান্ড। এমবাবুর ক্রস থেকে ক্লোজ রেঞ্জে পাওয়ারফুল এক হেডে নিজের দ্বিতীয় গোল তুলে নেন সেফারোভিচ। হুগো লরিস নড়ারও সময় পাননি।
তবু ফ্রান্সই জয় দেখছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১০ সেকেন্ডের মতো বাকি থাকতে ফের রোমাঞ্চ। জাকার দূর থেকে বাড়ানো পাস গোলপোস্টের একদম কাছে পেয়ে চোখের পলকে গোল করে দেন মারিও গাভরানোভিচ। ৩-৩ সমতায় ফেরে সুইজারল্যান্ড।
শেষ সময়ে ফ্রান্সের কপালটা খুলতে পারতো। যোগ করা সময়ে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে বুকে রিসিভ করে পায়ে নামান কোম্যান। ডান পায়ে শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ক্রসবারের ওপরের দিকে লেগে ফেরত আসলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।