ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঈদের আভাস
কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রবৃষ্টিতে বৈশাখের খরতাপ কমে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
আর কালবৈশাখীর এ সময়ে এমন আবহাওয়া আগামী দু’তিন ধরেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর; বিশেষ করে ঈদের দিন মঙ্গলবার বিক্ষিপ্তভাবে সর্বত্র ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশে ঈদ উল ফিতর উদযাপিত হবে। সকালেই দেশজুড়ে ঈদগাহ ও স্থানীয় মসজিদের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদের দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল ইসলাম নেওয়াজ কবির বলেন, “রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।“
কোভিডবিধির কড়াকড়িতে গত দুই বছর ঈদ জামাত সীমিত ছিল চার দেয়ালের ভেতর। কোলাকুলিতেও ছিল মানা, সংক্রমণ কমে আসায় এবার ঈদ ফিরছে উৎসবের পুরনো মেজাজে। তবে এতে কিছুটা বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি।সোমবারও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এমন তাপমাত্রায় বিক্ষিপ্ত ঝড় হাওয়া ও বৃষ্টির কারণে অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে না।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নিকলি, রাঙ্গামাটি, সিলেট, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, রংপুর, সৈয়দপুর, ডিমলা, রাজারহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুমারখালী, বরিশাল, খেপুপাড়া ও পটুয়াখালীতে বৃষ্টি হয়েছে।
এসময় মোংলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল জানান, গরম তো আছেই; তবে তুলনামুলক কম। রাজধানীতে ঈদের দিন একটানা বৃষ্টি বা ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা কম। তবে সকালে বা দিনের যে কোনো সময় এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সময় কোথাও কোথাও অস্থায়ী দমকাও হতে পারে।
বৈশাখের শুরু থেকে রাজধানীসহ সর্বত্র টানা এক সপ্তাহের বেশি ধরে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। বৃষ্টি না থাকায় অস্বস্তিকর এ গরমে নাগরিক জীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে ঝড়োহাওয়া ও বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা শুরু হয়। কয়েকদিন ধরে হালকা বৃষ্টিতে ধীরে ধীরে প্রশমিত হয় এ তাপপ্রবাহ।
বৃষ্টি মাথায় রেখে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি
দুই বছর পর এবার রোজার ঈদের প্রধান জামাতটি হবে সকাল ৮টায় ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়বেন ঈদের সকালে। মহামারীর কারণে গেল চারটি ঈদে ঈদগাহ ছিল আয়োজনশূন্য।
জাতীয় ঈদগাহের সর্বশেষ প্রস্তুতি চলছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই মাঠে ১২১ কাতারে নামাজ পড়বেন মুসল্লিরা। নারীদের জন্যও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে।
বৃষ্টির কথা ভেবে টানানো হয়েছে তেরপল, মাঠজুড়ে বিছানো হয়েছে গালিচা। অজুর ব্যবস্থাসহ মোবাইল টয়লেট থাকছে। গরমে মুসল্লিরা যাতে কষ্ট না পান, সে জন্য ৫৫০টি সিলিং ফ্যান ও ১৫০টি স্ট্যান্ড ফ্যান বসানো হয়েছে।বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সেবামূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে যানজট না থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে ফিরেছে মানুষ। তবে গরমের মধ্যে অস্বস্তি ছিল কিছুটা। যদিও ঝড়বৃষ্টির মত বৈরি আহাওয়ার মধ্যে পড়তে হয়নি তাদের। সড়ক পথে ছিল না তেমন চাপ। নৌপদেও দুর্ঘটনার খবর মেলেনি।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিক লঘুচাপ রয়েছে। আগামী কয়েকদিনে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি জানাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপর দিয়ে ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকায় নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।