ঝুলন্ত তারহীন সিলেটের কৃতিত্ব নিয়ে কাড়াকাড়ি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঝুলন্ত তারহীন সিলেট শহর গড়ে তোলার জন্য ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কৃতিত্ব কার এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল তর্কযুদ্ধ। পুরো কাজ শেষ না হতেই এ অর্জনের কৃতিত্ব কেউ কেউ দিচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনকে (সিসিক), আবার কেউ কেউ বলছেন, এই কৃতিত্ব বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। এই তর্কের প্রেক্ষাপটে পিডিবিকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলতে হয়েছে, প্রকল্পটি পিডিবির। এ কাজে সিসিক শুধু সহযোগিতা করছে। ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের এই কাজ চলছে।
পিডিবি সিলেট বিভাগের প্রকল্প পরিচালক এমএম সিদ্দিক বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষ উদ্যোগে ও সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সিলেট শহরে পাইলট ভিত্তিতে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎলাইন নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কাজে সিসিক সহযোগিতা করছে।
এ বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমি তো বলিনি এটা সিসিকের কাজ। এটা সরকারের উন্নয়ন কাজ। বিদ্যুৎ বিভাগকে দিয়ে করানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ কি আমরা করতে পারব? তবে এ কাজ করার জন্য সড়ক খুঁড়তে হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ কাজের আগে ট্রান্সফর্মার সরানোর শর্ত দিয়েছিল। প্রজেক্টের ডিপিপিতে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার জন্য রাস্তা খোঁড়ার টাকা বরাদ্দ ছিল না। রাস্তা খুঁড়লে সিসিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। সেক্ষেত্রে প্রকল্প বাতিলের আশঙ্কা ছিল। অর্থাৎ এ প্রকল্প না করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তারা সবটুকু করেছে। আমি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা কাটতে বলেছি, নয়তো কাজ হতো না।
মেয়র নিজে ঠিকাদারের সঙ্গে থেকে কাজ করিয়েছেন দাবি করে বলেন, সিলেটকে স্মার্ট নগরে রূপ দিতে তারের জঞ্জাল পাতালে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে সিলেটবাসী। প্রকল্পটি শেষ হলে পর্যাক্রমে পুরো শহরের বিদ্যুৎ লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে।
ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি ছিল বলে তিনি জানান। ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট শহরে সাত কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন নির্মাণের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক এমএম সিদ্দিক বলেন, আম্বরখানা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎলাইন বসে গেছে। এখানে ৫ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী মাসে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল লাইনের কাজ পুরোপুরি শেষ করার পর চৌহাট্টা থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়া হবে। এখন হযরত শাহজালাল দরগাহ এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, প্রায় এক বছর পরে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ বছরই ফেব্রæয়ারিতে সাত কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎলাইন নির্মাণের এই প্রকল্প ঘিরে সিলেট শহরবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, ঝুলন্ত তারবিহীন শহর হয়ে উঠেছে সিলেট।