ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে হামলা-ভাঙচুর, ৭ কর্মকর্তা বরখাস্ত
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৭ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় ১৫ জনের নাম উলেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখা ঝিনাইদহের কর্মকর্তা মো. আক্কাচ আলী, প্রিন্সিপাল অফিসের কর্মকর্তা রোকন উদ্দিন, শৈলকুপার শেখ পাড়া ব্রাঞ্চের অফিসার হার“ন অর রশিদ, শৈলকুপা শাখার সিনিয়র অফিসার ক্যাশ নারশেদ আলী বিশ্বাস, জেলার কালিগঞ্জ শাখার অফিসার হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলার রবি নারিকেলবাড়িয়া ব্র্যাঞ্চের অফিসার মন্টু ঘোষ এবং শৈলকুপা ব্র্যাঞ্চের সিনিয়র অফিসার মানবেন্দ্র নাথ।
একসঙ্গে ৭ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার খবরে স্থানীয়ভাবে ইমেজ সংকটে পড়েছে সোনালী ব্যাংক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে ১ জানুয়ারি রাত সোয়া ৭টার দিকে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা মারপিট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর আগে ব্যাংকটির প্রভাবশালীরা বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেন।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ। জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেছেন, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানের নির্দেশে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) হুমায়ূন কবির বলেন, ১ জানুয়ারি রাত সোয়া ৭টার দিকে ১৫-১৬ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষে ঢুকে পড়ে এবং উপস্থিত সবাইকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় মোহাম্মদ আব্দুল মজিদকে কক্ষ থেকে বের করে আনে এবং অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার অন্তত ৮ জন ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার অফিসার (সাবেক সিবিএ নেতা) বর্তমান স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের স্থানীয় সভাপতি আক্কাচ আলীর নেতৃত্বে এ হামলাসহ ভাঙচুরের ঘটনা বলে দাবি করেন তিনি।
হামলাকারীরা তার (হুমায়ূন কবির) টেবিলের গ্যাস ভাঙচুর করেছে বলেও জানান তিনি। ঘটনার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরমভাবে আতংকিত হয়ে পড়েছেন। অপর দিকে সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ নেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। তারা ঘটনার বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের ঝিনাইদহ শাখার সভাপতি ও জেলা শহরের আরাবপুর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার এনামুল হক শামীম বলেন, ঘটনার দিন তারা জোনাল অফিসে ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন রাত ৭টার বেশি বাজে।
তিনি বলেন, তখন তারা দেখেন ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে সাবেক সিবিএ নেতা বর্তমান স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সভাপতি আক্কাচ আলীসহ কয়েকজন বৈঠক করছেন।
এনামুল হক শামীমের ভাষায় আক্কাচ আলীরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষে যান তারা। কয়েক মিনিটের মধ্যে ৩০-৪০ জন্য হঠাৎ করে সেখানে আসে এবং উপস্থিত সবাইকে মারধর শুরু করে দেয়। সে সময় হামলাকারীরা ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন শামীম। পুলিশ আসার পরে হামলাকারীরা জোনাল অফিস ত্যাগ করে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে শামীম বলেন, সাবেক সিবিএ নেতা আক্কাচ আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজাররা।
বদলি ও লোন বাণিজ্য করে থাকে আক্কাচ এমন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন এক সঙ্গে কয়েকজন ম্যানেজারকে পেয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় আক্কাচ গং। জেলা শহরের আরাবপুর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার এনামুল হক শামীমের দেয়া তথ্যমতে পরিকল্পিত এ হামলার সঙ্গে বহিরাগত ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক স্থানীয় শাখার অফিসার্স সমিতির সাবেক সেক্রেটারি হানিফ শেখসহ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। তবে অজ্ঞাত কারণে তাদের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়নি।