December 21, 2024
জাতীয়

ঝালকাঠির পিপি হায়দার হত্যায় ৫ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ঝালকাঠি আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হায়দার হোসাইন হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যের মৃত্যুদÐ বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদÐ অনুমোদনের জন্য আবেদন) গ্রহণ এবং আসামিদের আপিল, জেল আপিল খারিজ করে দিয়ে গতকাল সোমবার এ রায় করে।

আদালতে ডেথ রেফারেন্সের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ জানিয়েছেন, পাঁচ আসামির মধ্যে পলাতক বেল্লাল হোসেন ছাড়া আসামি মুরাদ, ছগির ও আমীর হোসেন আপিল এবং আসামি তানভীর জেল আপিল করেছিলেন।

গত সোমবার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষ করে আদালত রোববার রায়ের জন্য রেখেছিল। সে অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ ও আসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে দিয়ে রোববার রায়ের কার্যকরী অংশ (অপারেটিভ পার্ট) ঘোষণা করে হাই কোর্ট।

যাদের মৃত্যুদÐ বহাল রাখা হয়েছে তারা হলেন- বরগুনার বেল্লাল হোসেন, আবু শাহাদাৎ মো. তানভীর ওরফে মেহেদী হাসান, খুলনার মুরাদ হোসেন, ঢাকার ছগির হোসেন ও আমীর হোসেন। আসামি মুরাদ হোসেনের পক্ষে এসএম মাহবুবুল ইসলাম, আমীর হোসেন পক্ষে এস এম শাহজাহান, ছগির হোসেন পক্ষে আইনজীবী মো. কামাল শুনানি করেন। আর জেল আপিলকারী আসামি বেল্লাল হোসেন ও মো. তানভীরের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী মো. আসাদুর রহমান।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সাক্ষ্য পর্যালোচনা ও মামলার দালিলিক প্রমাণাদি বিবেচনায় নিয়ে হাই কোর্ট বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদÐ বহাল রেখেছেন। এখন আসামিরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সাজা কার্যকর করা আটকে যাবে বলে জানান এই আইন কর্মকর্তা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আসামিদের সঙ্গে কথা বলে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঝালকাঠি আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির হায়দার হোসাইন ঝালকাঠিতে জেএমবির আত্মঘাতী হামলায় দুই বিচারক নিহত হওয়ার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। ওই মামলা পরিচালনার সময়ই হায়দার হোসাইনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল জেএমবি।

দুই বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের ২৯ মে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমানসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল আদালত। তাদের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০০৭ সালের ২১ মার্চ। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল জেএমবির জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন হায়দার হোসাইন।

এ ঘটনায় হায়দার হোসাইনের ছেলে তারিক বিন হায়দার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ঝালকাঠি থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত মুরাদ হোসেনকে খুলনার টুটপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া মুরাদের স্বীকারোক্তি পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তার করা হয় তানভীর ওরফে মেহেদী হাসান ও আমীর হোসেনকে।

তিন বছর তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি জেএমবির পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিম আদালত ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য বরিশালের দ্রæত বিচার আদালতে পাঠান।

ওই আদালত ১৩৫ কার্যদিবসে ৫৭ জনের মধ্যে থেকে ৫৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর বিচার সম্পন্নের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ২০১১ সালের ২৬ জুন দ্রæত বিচার আদালত মামলাটি ঝালকাঠির আদালতে ফেরত পাঠান। ২০১১ সালের ১২ জুলাই ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির পুনর্বিচার শুরু হয়। একই দিন মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর ২০১৫ সালে ১১ ফেব্রæয়ারি ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালিম জেএমবির পাঁচ সদস্যের ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *