জেলা যুবলীগ: কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচনের পক্ষে তৃণমূল
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে ৯ জন প্রতিদ্ব›দ্বী
মিলন হোসেন
সম্মেলন প্রসঙ্গে কেন্দ্র থেকে তাগিদ দেওয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছেন খুলনা জেলা যুবলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতাসীন দলের এই যুব সংগঠনে প্রাণের সঞ্চয় ঘটেছে। সম্মেলনের খবরে নেতৃত্ব প্রত্যাশী এক ঝাঁক নেতা তৎপর হয়ে উঠেছেন। চলছে জোর লবিং-গ্র“পিং। কে পেতে যাচ্ছেন যুবলীগের নেতৃত্ব এমন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনায় সরব হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গণ। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন পূরতন মিলে ৯ নেতার নাম আলোচনার শীর্ষ। তবে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দিয়ে নয়, কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচিত করতে চান সংগঠনটির তৃণমূলের নেতাকর্মী।
দলীয় সূত্র জানায়, খুলনা জেলা যুবলীগের তিন বছর মেয়াদের কমিটির বয়স হয়েছে প্রায় ১৭ বছর। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ মে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিগত ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল ও সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাবু এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক না থাকায় জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ঝিমিয়ে পড়লেও হাতে গোনা ৫/৬ জন নেতা যুবলীগের হাল ধরেন। ফলে তৃণমূলে তাদের শক্ত অবস্থান গড়ে ওঠে। এবারের সম্মেলনে এদের মূল্যায়ন করা হবে বলে সংগঠনটির নীতি নির্ধারণী মহল ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদের মধ্যে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম কামরুজ্জামান, দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ, প্রচার সম্পাদক জলিল তালুকদার ও তথ্য গবেষণা সম্পাদক জামিল খানের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে।
এদের প্রচেষ্টা ও জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একাধিক বৈঠক, কাউন্সিলর তালিকা প্রনয়ণসহ সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। অভিভাবকহীন যুবলীগের নেতৃত্বদানকারী এই ৫ নেতা যুবলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে সরদার জাকির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এবিএম কামরুজ্জামান, আসাদুজ্জামান রিয়াজ, জলিল তালুকদার ও জামিল খান প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে চাইছেন।
এদিকে দীর্ঘ দিন সম্মেলন না হওয়ায় জেলা যুবলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীর তালিকায় যুক্ত হয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতারা। এদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আবু হানিফ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা চৌধুরী রায়হান ফরিদ, যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুর রহমান সোহাগ ও সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন আর রশিদ নেতৃত্ব প্রত্যাশী। এদের মধ্যে শেখ আবু হানিফ ও চৌধুরী রায়হান ফরিদ সভাপতি এবং মাহফুজুর রহমান সোহাগ ও হারুন আর রশিদ সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী বলে জানিয়েছেন। সব মিলে সভাপতি পদে তিন জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা আসছেন।
অপরদিকে দীর্ঘদিন পর হলেও সম্মেলন ঘিরে প্রাণের সঞ্চয় ঘটেছে খুলনা জেলা যুবলীগে। সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরগরম হয়ে উঠেছে আওয়ামী শিবির। কে আসতে পারেন যুবলীগের নেতৃত্বে এমন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনায় সরব হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে যোগ্যতা তুলে ধরে স্যোসাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন। দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন জেলা আওয়ামী লীগসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বারে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, জেলা যুবলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল ও সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাবু দীর্ঘ দিন সংগঠনের হাল ধরে থাকা ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে চাইছেন।
কেমন নেতা চান জানতে চাইলে ফুলতলা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এসকে আলী ইয়াছিন এই প্রতিবেদককে বলেন, সাংগঠনিক পন্থায় কাউন্সিলরদের প্রত্যাক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমরা নেতা নির্বাচিত করার পক্ষে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘ দিনের সাথি সংগঠনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদেরকে সমর্থন করি।
তেরখাদা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এএফএম মফিজুর রহমান মফিজ বলেন, কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোন কমিটি আমরা মানবো না। আমরা বরাবরই সম্মেলনে পক্ষে। নতুন নেতৃত্ব গঠনে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের প্রতি আহবান জানাই।
দাকোপ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গৌর পদ বাছাড় বলেন, যারা দূর্দীনে যুবলীগের হাল ধরেছেন তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চান যুবলীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। কোন হাইব্রিড যুবলীগের নেতৃত্বে আসলে তা হবে চরম আত্মঘাতিক।
দিঘলিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইয়াজুল ইসলাম বলেন, যারা দীর্ঘদিন যুবলীগের হাল ধরে আছেন তারাই যোগ্য ও মেধাবী। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভীষণ বাস্তবায়নে দলের ত্যাগী এই নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের পক্ষে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।
সম্মেলন প্রসঙ্গে জেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ার সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল জানান, খুলনা জেলা যুবলীগ সম্মেলন করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কাউন্সিলদের ভোটে নেতা নির্বাচিত হলে সংগঠন গতিশীল হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের পক্ষে এমন দাবি করে তিনি বলেন, যারা দীর্ঘদিন সংগঠনের হাল ধরে আছেন অবশ্যই তাদের মূল্যায়ন হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ১১ বছর পর নগর যুবলীগের আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব একমত হওয়ায় সমঝোতার মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে যুবলীগের কমিটি। নগর যুবলীগের কমিটি মতামতের ভিত্তিতে হলেও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছেন সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করতে। এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যুবলীগের নেতৃবৃন্দকে। যদি একান্তই সম্মেলন করা না যায় সেক্ষেত্রে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সোহেল ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, জেলা যুবলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল, সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাবু এমপি’র সমন্বয়ে ও তাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন পুরাতনদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন হতে পারে বলে বিশ্বস্ত নিশ্চিত করেছেন।