জাহাজ আগমনে ৭০ বছরের রেকর্ড ভাঙলো মোংলা বন্দর
দ. প্রতিবেদক
প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে গতিশীল করার চেষ্টা অবশেষে কাজে আসতে শুরু করেছে, যে ধারাবাহিকতায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বন্দরের ইতিহাসে জাহাজ আগমনের রেকর্ড হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় ৭০ বছরের রেকর্ড ভেঙে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়েছে।
এই সময়ে বন্দরে ১৪ হাজার ৪৭৪টি গাড়ি এবং ৪৩ হাজার ৯৫৯টি টিইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার) কন্টেইনার খালাস ও বোঝাই হয়। এতে বন্দরের আয়ও যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ মোস্তফা কামাল জানান, বন্দর প্রতিষ্ঠার পর ৭০ বছরে এত জাহাজ বন্দরে আর আসেনি।
রবিবার সংবাদ সম্মেলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ী ও জনগণের কথা চিন্তা করে লকডাউনের মধ্যেও কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখায় বন্দরের আমদানি-রফতানি বেড়েছে। জাহাজ, কার্গো, গাড়ি ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সকল সূচক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বন্দরের আয় স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ভবিষ্যতে বন্দরের কার্যক্রম আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে কার্যক্রম বাড়ায় এই বন্দর ব্যবহারে দেশি বিদেশি আমদানি ও রপ্তানিকারকরা আরও আগ্রহী হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর ১৫ বছর আগেও লোকসানে ছিল। ২০০৯ সালে গাড়ি আমদানিকারকরা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ দেখালে সরকার এই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানিতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়। সেই বছর থেকেই বন্দর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এই বন্দর দিয়ে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল (ফ্লাইঅ্যাশ ও ক্লিংকার), ইউরিয়া সার, চাল, কন্টেইনার, মেশিনারিজসহ নানা পণ্য আমদানি হয়। এখন সবচেয়ে বেশি আসে গাড়ির জাহাজ।
এক প্রশ্নের জবাবে রিয়ার অ্যাডমিরাল মুসা জানান, আগামীতে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বছরে ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ব্যবহার হবে। তখন বছরে ১৩০টি মাদারভেসেল এবং ৩০০টির ওপর লাইটার জাহাজ আসলে বন্দরের কার্যক্রম আরও বাড়বে।
খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বন্দরকে ঘিরে সরকারের নানা পরিকল্পনার কারণে এই বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যা বেড়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে বন্দরে আরও চাপ বাড়বে। এই কারণে সক্ষমতা বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ অব্যহত বয়েছে।
১৯৫০ সালে বৃটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ দ্য সিটি অব লায়নস সুন্দরবনের মধ্যে পশুর নদীর জয়মনিরগোল নামক স্থানে নোঙ্গর করার মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ ভিড়েছিল ৯০৩টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯১২টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮৪টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬২৩টি জাহাজ এসেছিল এই বন্দরে।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও রেকর্ড সংখ্যক বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমদানি-রফতানিকারকরাও বন্দর ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি শেখ লিয়াকত আলী লিটন বলেন, সরকারের নজরদারির অভাবে ২০০১ সালের পর বন্দরটি মৃত হওয়ার উপক্রম হয়। ২০০৯ সালের পর সরকার উদ্যোগি হলে এটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দেশি-বিদেশিরা এই বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি করছেন উল্লেখ করে তিনি বন্দরটিকে আরও গতিশীল করতে সরকারকে আরও আধুনিকায়ন করার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এর সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার, পরিচালক (প্রশাসন) শাহীনুল আলম, প্রধান অর্থ ও হিসাব নিরীক্ষক সিদ্দিক আহমেদ, হারবার মাস্টার মো. ফখরউদ্দিন, পরিকল্পনা প্রধান জহিরুল হক, প্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী, পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল প্রমুখ।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়