জাপা নিয়ে আ. লীগ মাথা ঘামাচ্ছে না: কাদের
এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর তার দল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের টানাপড়েন নিয়ে আওয়ামী লীগে কোনো ‘মাথাব্যথা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে যুবলীগের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তাদের কে চেয়ারম্যান হবে, কে বিরোধী দলের নেতা হবে- এটা তারাই নির্ধারণ করবে। আওয়ামী লীগ এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না, আমাদের কোনো প্রয়োজনও নেই।
বিরোধী দলীয় নেতা কে হবেন- সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের কোনো ‘পক্ষপাত নেই’ বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের।
মহাজোটের শরিক আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হয়েই গত কয়েকটি নির্বাচন করেছে। দশম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন এরশাদের স্ত্রী রওশন। আর এরশাদ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও সরকারের মন্ত্রিত্ব নিয়েছিলেন এ দলের কয়েকজন। ফলে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা জোটে এরশাদের দলের।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবিতে জাতীয় পার্টি আবারও প্রধান বিরোধী দল হয়; এরশাদ হন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।
এরশাদ গত ১৪ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তার ভাই জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, এটাই ছিল এরশাদের ইচ্ছা।
কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়ে এরশাদের স্ত্রী রওশন অভিযোগ করেন, জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি।
এ নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে জি এম কাদেরকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ঘোষণার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠানো হয় জাতীয় পার্টির নামে। এর পাল্টায় বুধবার স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে রওশন বলেন, দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এরপর জাতীয় পার্টির একটি অংশ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে রওশনকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে এরশাদের দল ভাঙনের দুয়ারে পৌঁছে যায়। আর এই সঙ্কট থেকে উত্তরণে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে সরকারের দিকে তাকিয়ে বলেও খবর আসে সংবাদমাধ্যমে।
সরকার যাকে চাইবে তিনিই বিরোধী দলীয় নেতা হবেন- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এই কথা মিথ্যা। বিরোধীদলীয় নেতা যিনি নিয়ম অনুযায়ী হবেন, স্পিকার তাকেই নির্বাচিত করবেন। এখানে আমাদের পার্টির কোনো কিছু বলার নেই। আমরা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্থক্ষেপ করতে চাই না। এখানে কোনো প্রকার হস্থক্ষেপের প্রশ্নই ওঠে না।”
‘হাসিনার অগ্রযাত্রায় বিএনপি সঙ্কটে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন সামনে রেখে যুবলীগ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা বিরোধী রাজনীতিকে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে।
“আজকে বিরোধী দল বিএনপি যতই বিষোদ্গার করুক, চেচামেচি করুক, এটাই আজকে বাস্তব যে, উন্নয়নে-অর্জনে শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতিকে সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। নেতিবাচক রাজনীতি করে বিএনপির এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নেই।
“আজকে এই সঙ্কটের কারণেই বিএনপি বেহাল, দিশেহারা পথিকের মত, পথহারা পথিকের মত দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জনগণের প্রতি আস্থা হারিয়ে বিদেশিদের কাছে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছে, নালিশ করছে। বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনের জন্য ১৬ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন।
“আগামীকাল মনোনয়ন বোর্ডের সভা। বঙ্গবন্ধু পরিবারে কেউ প্রার্থিতায় নেই। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে থেকেই প্রার্থী ঠিক করব।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।