জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে খুবি শিক্ষার্থীর ‘সমুদ্রের ঢেউয়ের সুর’
খুবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থী রূপক কুমার সাহা’র চিত্রকর্ম ‘সমুদ্রের ঢেউয়ের সুর’ প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
শিল্পকর্মের বর্ণনা দিয়ে রূপক সাহা বলেন, শৈশবে ঠাকুর ঘরে মা আমাকে একদিন শঙ্খ হাতে দিয়ে বলেছিলেন, “শঙ্খ এর ভেতরের অংশটা কানের কাছে নিলে তুমি সমুদ্রের শব্দ শুনতে পারবে।“ সেই থেকে সমুদ্রের শব্দের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা কাজ করে। ২০১৮ সালে শিক্ষা সফরে গিয়ে আমি সেই শব্দটা অনুভব করি। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ার সময় একটা সুর সৃষ্টি করছে, এগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার যখন আরেকটি ঢেউ আসছে, তখন আগের সুরটি শূন্যে মিলে যাচ্ছে। আমি আমার এই পুরো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি করেছি আমার এই শিল্পকর্ম “ সমুদ্রের ঢেউয়ের সুর”।
শিল্পকর্মটির ডিজাইন এর ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি এটি তৈরিতে সাদা,আকাশী ও নীল তিনটি রং ব্যবহার করেছি এবং তাতে কাঠের মাধ্যমে ঢেউয়ের একটা বিমুর্ত ফর্ম আনার চেষ্টা করেছি। সাথে এক প্রকার আঠা ব্যবহারে সমুদ্রের ঢেউ এর ফলে সৃষ্ট ফেনা বুঝাচ্ছে। কাঠের ফর্মের উপর দন্ডায়মান প্রতীকগুলো সুরের বারংবার আবর্তন কে এবং উপরে ঝোলানো সুরের প্রতীকগুলো দিয়ে সেই সুরের শূন্যে মিলে যাবার বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
অনুভূতি ব্যক্ত করে এই শিল্পী বলেন, বর্তমান সময়টা প্রত্যেকটা মানুষের জন্য অনেক খারাপ যাচ্ছে। ঠিক এসময়ে শিল্পীদের নামসহ শিল্পকর্মের তালিকা আমাকে যেন ঠিক অনেকটা অভিশাপমুক্ত করেছিলো এই হতাশার হাত থেকে। শিল্পী বাঁচে তার শিল্পকর্ম নিয়ে। প্রতিটি শিল্পকর্ম শিল্পীর কাছে এক একটা সন্তান সমতুল্য। আর যখন তা হাজারো দর্শকের কাছে কোন বার্তা দিতে সক্ষম হয় কোন প্রদর্শনী এর মধ্য দিয়ে,শিল্পীর আত্মা যেন এক অসীম তৃপ্তি লাভ করে। এরপূর্বে জাতীয় পর্যায়ে একাধিক বার “জাতীয় নবীন শিল্পকর্ম প্রদর্শনী”,” জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনী” তে আমার ভাস্কর্য প্রদর্শিত হলেও,এটা ছিলো আমার জন্য প্রথম। করোনা পরিস্থিতির জন্য এই প্রদর্শনীটি অনলাইনে হলেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি কবে সকল শিল্পীর কাজগুলো নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হবে।
নিজের পরিবার, খুবি’র ভাস্কর্য ডিসিপ্লিন এর শিক্ষকবৃন্দ এবং সিনিয়র ও সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে সবার আশীর্বাদ নিয়ে বাকি জীবনটাও ভাস্কর্য চর্চায় কাটাতে চাই।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্ধোধন করা হয়। এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় এবার ভার্চুয়ালি এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।