September 10, 2025
আন্তর্জাতিককরোনা

জাতীয়তাবাদ-রাজনীতির শিকার অক্সফোর্ডের টিকা!

প্রত্যাশা ছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনা টিকা হবে পুরো বিশ্বের। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণের পথে বিশ্ব রাজনীতি আর জাতীয়তাবাদ বাধা হয়ে উঠেছে কিনা তা নিয়ে এবার প্রশ্ন উঠেছে।

বিবিসি জানিয়েছে, ব্রিটেনের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ফাইজার ও মডার্নার মোট টিকার তুলনায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বেশি মানুষের জীবনকে সুরক্ষা দিয়েছে। তবে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে এখন এই টিকার ব্যবহার প্রায় হচ্ছে না।

সেখানে এ পর্যন্ত তিন কোটি ৭০ লাখ নাগরিক বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪৮ হাজার জন নাগরিক। এই টিকাকে মূল সারিতে রাখেনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ টিকার অনুমোদন দেয়নি।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশেষ আয়োজনে অংশ নেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যার জন বেল। সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার এমন দশার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।

তার অভিযোগ, ইইউর নীতি-নির্ধারকেরা এই টিকার সুনাম এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, যা বিশ্বের সব প্রান্তে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি বিজ্ঞানী ও রাজনীতিকদের ‘বাজে আচরণ’ সম্ভবত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এ নিয়ে তাদের গর্ব করার কিছু নেই।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা এ টিকাকে ‘বিশ্বের জন্য ব্রিটেনের উপহার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ২০২১ সালের শুরুর দিকে অক্সফোর্ডের টিকা উদ্ভাবনের বিষয়টি সাফল্য হিসেবে উদযাপন করেছিল যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ সরকার তখন টিকার ভায়ালের গায়ে ইইউর পতাকার ছবিও যুক্ত করতে চেয়েছিল।

কিন্তু অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা টিকার গায়ে ব্রিটিশ ছাপ রাখতে চাননি। তাদের ভাষ্যমতে, মহামারী কোনো সীমানা মানে না। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং অরক্ষিত দেশগুলোতে ভাইরাসের রূপ বদল ঠেকানোই ছিল তাদের লক্ষ্য।

যে পরীক্ষাগারে এ টিকার উদ্ভাবন হয়েছে অক্সফোর্ডের সেই জেনার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল বলেন, সে সময় অনেক বেশি জাতীয়তাবাদ সামনে চলে এসেছিল।

তবে দেশটিতে এ টিকার অনুমোদন এবং ইইউ থেকে ব্রিটেনের আলাদা হওয়াটা একই সময়ে ঘটেছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ভ্যাকসিন কনট্যাক্ট গ্রুপের ড. ভেরোনিক ট্রিলেট-রেনয়ির জানান, তারা সে সময় যুক্তরাজ্যে লাগাতার টিকাদান কর্মসূচির কথা শুনছিলেন, কিন্তু টিকা পাচ্ছিলেন না।

জানুয়ারির শেষ দিকে ইইউ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেয়। কিন্তু এরপর জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের অক্সফোর্ডের টিকা দেবে না। সমালোচনা করেন ফরাসি প্রেসিডেন্টও। তবে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি সব বয়সী প্রাপ্তবয়স্কের জন্য এ টিকার অনুমোদন দিলে দেশ দুটি সিদ্ধান্ত বদলায়। তবে এর মধ্যেই ফ্রান্সের অনেক চিকিৎসক অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাদ দিতে বাধ্য হন।

বিবিসি জানিয়েছে, মার্চের দিকে বেশকিছু ঘটনা ধরা পড়ে। সেখানে দেখা যায়, এই টিকা দেওয়ার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেধে যাচ্ছে। তবে সেই সংখ্যা ছিল একেবারেই কম।

অপরদিকে উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিয়েও জটিলতা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী টিকা প্রাপ্তিতে ব্রিটেনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা সে দেশে তাদের প্ল্যান্টে উৎপাদিত টিকা ইইউতে পাঠাতে পারছিল না। অথচ ইইউর কারখানা থেকে ১০ লাখ ডোজ টিকা যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিল। বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয় কূটনৈতিক টানাপোড়েন।

তবে যখন বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হলো, তখন ফাইজার ও মডার্নার টিকার সহজপ্রাপ্যতা এবং বয়স নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকায় অক্সফোর্ডের টিকার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। যুক্তরাজ্যে বুস্টার ডোজ হিসেবে অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ এখন মডার্না ও ফাইজারের টিকাই পাচ্ছেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *