November 27, 2024
জাতীয়

জাতির পিতার আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার এ আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) এ দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। রক্তের ঋণে আমাদের আবদ্ধ করে গেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য- তার এ রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে সেই আদর্শ নিয়েই আমাদের পথচলা।’

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি নিবেদিত ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন।

তারানা হালিমের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে স্বজন হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দিনটি (১৫ আগস্ট) আমাদের জন্য শোকের দিন, কষ্টের দিন। কিন্তু সব থেকে বড় কথা হলো বাঙালি জাতির জন্য সব হারানোর দিন, শোকের দিন।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি সব হারিয়েছি। আমি জানি হারানোর বেদনা খুব কষ্টকর। সেই কষ্ট সহ্য করে একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই লক্ষ্য।’

‘ইনশাআল্লাহ এ বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। যে দেশের স্বপ্ন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ বাস্তবায়িত হবে।’

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে, দারিদ্র্যের হার আমরা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে ৪৫ ভাগ ছিল সেখানে আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মানুষের গড়আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এদেশে একটি মানুষও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত থাকবে না। একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীন মানুষের জন্য খাসজমি বিতরণ করে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন। আমরা তার জন্মশতবার্ষিকীতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমরা সেইভাবে গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছি ঘরহারা মানুষের।

চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। শিক্ষার আলো আজকে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। প্রায় ৭৪ ভাগ মানুষ এখন সাক্ষরতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’

‘বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছেন। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশকে যেমন গড়ে তোলা, পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করা, তিনি সেটা খুব সফলভাবে করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন সেটা যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন, তাহলে বাংলার মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারতো। ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে উন্নত জীবন পেতে পারতো।’

‘কিন্তু ঘাতকের দল সেটা হতে দেয়নি। যারা স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাঙালির বিজয় চায়নি, তারাই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। কিছু লোক তো বেঈমানিও করে, মুনাফেকি করে। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *