জাজিরা মেয়রপুত্র ধর্ষণ মামলায় ফের কারাগারে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর স্থানীয়দের ক্ষোভের মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার মেয়রের ছেলেকে ধর্ষণ মামলায় আবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মির্জা হজরত আলী জানান, আদেশের পর জাজিরা পৌরসভার মেয়রের ছেলে মাসুদ বেপারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ৩০ জুন মাসুদ বেপারী প্রথম গ্রেপ্তার হন। এর আট দিনের মাথায় তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।
এদিকে, হাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ধর্ষণ মামলার বাদীর পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগে মেয়েটির পরিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা পৌর এলাকার আরাচন্ডি গ্রামের মেয়ে জাজিরা ডিগ্রি কলেজের ১ম বর্ষের এই ছাত্রীর সঙ্গে জাজিরা মডার্ন ক্লিনিকের কর্মচারী একই এলাকার শরীফ সরদারের সঙ্গে প্রেম হয়। শরীফ বিয়ের প্রতিশ্র“তি দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক করে সরে পড়েন। এরপর শরীফ সরদার অন্যত বিয়ে করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, শরীফের বিচারের আশ্বাসে গত ২৯ জুন বিকালে এই কলেজছাত্রীকে জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ বেপারীর ছেলে মাসুদ বেপারী ফোন করে তার বাড়িতে ডেকে নেন। এরপর মাসুদ মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন।
আইনজীবী মির্জা হজরত আলী জানান, পরে মেয়েটি কৌশলে পালিয়ে এসে ওই রাতেই বিষয়টি পুলিশকে জানান। রাতেই মাসুদ বেপারীকে আটক করে পুলিশ।
৩০ জুন ওই মেয়েটি ও তার বাবা জাজিরা থানায় দুই জনকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ১ জুলাই আদালতে হাজির করা হলে মাসুদকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।
হজরত আলী বলেন, ৭ জুলাই মাসুদের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয় শরীয়তপুর আদালতে। একই সময় জাজিরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন শেখ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
বিচারক মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জামিন ও রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করেন। ৮ জুলাই মাসুদ বেপারীর আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফের জামিন আবেদন করলে জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মরিয়ম মুন মঞ্জুরী মাসুদকে জামিন দেন।
এদিকে, ছাড়া পাওয়ার পর মাসুদ মেয়েটির পরিবারকে মামলা তুলে নিতে তার বাড়ি গিয়ে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। তাই মেয়েটির পরিবার ১০ জুলাই বুধবার জাজিরা থানায় মেয়েটির বাবা এবং মামলার বাদী নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এর আগে বুধবার স্থানীয় বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কামিশন, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
আইনজীবী হজরত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জাজিরা পৌরসভার মেয়রের ছেলে মাসুদ বেপারীকে অন্তর্র্বতীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তার আদালতে হাজিরা দেওয়ার ধার্য তারিখ ছিল। মাসুদ বেপারী আদালতে হাজিরা দিতে এলে জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস তার জামিনেআবেদন বাতিল করে তাকে আবার জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে ঘটনার শিকার ওই কলেজ ছাত্রী ও তার মা-বাবা উপস্থিত ছিলেন।