জলবায়ু পরিবর্তন: তাপমাত্রা আরও ১.৫ ডিগ্রি বাড়ার ‘সম্ভাবনা বাড়ছে’
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়েও এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বিশ্বনেতারা চলতি শতকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যেন ১৮৫০ সালের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে না উঠে, সেজন্য চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
অথচ ২০২৪ সালের বছরখানেক আগেই তাপমাত্রা বৈশ্বিক এ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারে এমন সম্ভাবনা এখন ২০ শতাংশে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।
তাদের সাম্প্রতিক মূল্যায়নে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এক বা একাধিক মাসের গড় তাপমাত্রা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমন সম্ভাবনাও ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা যে কতটা কঠিন, নতুন এ মূল্যায়ন তাই দেখাচ্ছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) জন্য যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তরের করা এ মূল্যায়নে গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর এখনকার গড় বার্ষিক তাপমাত্রাই ১৮৫০ সালের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। পরবর্তী ৫ বছর তাপমাত্রা এর আশপাশেই থাকবে বলেও অনুমান করছেন তারা।
স্বল্প সময়ের জন্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে থাকবে, আগের বেশ কয়েকটি গবেষণায় এমন সম্ভাবনা ১০% বলা হলেও এখন তা দ্বিগুণ মনে হচ্ছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের।
গড় তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় বিশ্বের কিছু কিছু অঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি উষ্ণতার দেখা পাবে; সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় আসছে ৫ বছরে পশ্চিম ইউরোপে ঝড়ের সংখ্যাও বাড়বে বলে পূর্বাভাসে বলছেন তারা।
মূল্যায়নে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিভিন্ন চলকের পাশাপাশি মানুষের কারণে হওয়া কার্বন নিঃসরণের প্রভাবও বিবেচনা করা হয়েছে।
তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চলতি বছর কার্বন নিঃসরণ কমার বিষয়টি ডব্লিউএমও-র এ মডেলে স্থান পায়নি; ২০২০ সালের প্রথমভাগের এ অবস্থা বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রায় তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করছে এ আবহাওয়া সংস্থা।
“কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনীতি ও শিল্পে দেখা দেওয়া মন্দা যে টেকসই ও সমন্বিত জলবায়ু বিষয়ক কর্মকাণ্ডের বিকল্প নয়, ডব্লিউএমও তা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের খুবই দীর্ঘ জীবনকালের কারণে চলতি বছর নিঃসরণ কমলেও তা বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্বই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে,” বলেছেন ডব্লিউএমওর মহাপরিচালক অধ্যাপক পেটেরি টালাস।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ যেভাবে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি করেছে, তেমনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যর্থতাও শতকের পর শতক ধরে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, বাস্তুসংস্থান ও অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
মহামারীর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো জলবায়ু পরিবর্তনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পথে হাঁটতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।