“জবানবন্দির পর মিন্নিকে আদালতে তোলা হয়নি কেন?”, প্রশ্ন খন্দকার মাহবুবের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিচারকের খাস কামরায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার পর তাকে আদালতে তোলা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাজনৈতিক প্রভাবে নিম্ন আদালতগুলো বেপরোয়া হয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে নির্দেশনাকেও অমান্য করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট এনক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে এসব অভিযোগ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুব।
তিনি বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে রিমান্ডে নেওয়ার পর তার স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে। কতটা সত্যি কতটা মিথ্যা সেটা বিচারে দেখা যাবে। যদি কাউকে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়, তাকে অবশ্যই বিচারিক আদালতে উপস্থিত করতে হবে। যেন সে বলতে পারে রিমান্ডে থাকাকালে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে- এটা আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা।
কিন্তু কথিত স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দির পরে তাকে আদালতে না নিয়ে সরাসরি জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। তার আইনজীবী আবেদন করে বলল যে, স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাই। তাকে আদালতে আনা হোক। কিন্তু তাকে আনা হল না- এভাবেই আইনের বরখেলাপ হচ্ছে।
গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করে একদল লোক। এ ঘটনায় করা মামলায় প্রধান সাক্ষী ছিলেন তার স্ত্রী মিন্নি। তাকে গত ১৬ জুলাই বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরদিন বিচারক মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। ৪৮ ঘণ্টার মাথায় পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে তার কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়। সেদিন জবানবন্দির পর আসামি মিন্নিকে বিচারকের খাস কামরা সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান।
মিন্নির বাবার অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে ও নির্যাতন করে এই জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এরপর তার জবানবন্দি প্রত্যাহার ও চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হলেও আদালত তা গ্রহণ করেনি। তার পক্ষে করা জামিন আবেদন শুনানির জন্য ৩০ জুলাই দিন রেখেছে আদালত।
মিন্নিকে জামিন না দেওয়া আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে খন্দকার মাহবুব বলেন, আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিধান রয়েছে, যে কোনো অপরাধে আসামি যদি মহিলা হয়, যদি অসুস্থ হয় তাহলে আদালত তাকে জামিন দেবেন।
এক্ষেত্রে তার (মিন্নিকে) জামিনের আবেদন করা হল। কিন্তু আইনের সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে রাজনৈতিক প্রভাবে অথবা একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে- মামলার মূল আসামিরা যাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সেই কারণে তাকে জামিন দেওয়া হলো না।
উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমি আশা করব, আমাদের উচ্চ আদালত এ ব্যাপারে নজর দেবেন। কি করে একজন মহিলাকে পুরুষ পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হলো। তারপরে বিচারিক আদালতে উপস্থিত না করে সরাসরি জেলে পাঠানো হলো।
এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে লিখিত আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোর্টের দায়িত্ব। তাকে যদি জামিন না দেওয়া হয়, তখন অবশ্যই উচ্চ আদালতে যখন আসবে। তখন আমরা এর প্রতিবাদ করব। আমরা চাই, আইন অনুযায়ী বিচার হোক, আইন অনুযায়ী সাজা হোক।
মিন্নিকে আইনি সহায়তা দেবেন কিনা জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, অবশ্যই। বিচার যাতে সঠিকভাবে হয়, ন্যায় বিচার যাতে পায়। রাজনৈতিক প্রভাবে যাতে বিচার না হয় সেটাই আমরা দেখব।
বরগুনার শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবীরা হাকিম আদালতের সাড়া না পেয়ে মঙ্গলবার জজ আদালতে তার জামিনের আবেদন করেছেন। মিন্নির আইনজীবী মাহাবুবুল বারী অসলাম পরে সাংবাদিকদের জানান, বিচারক জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করে নিম্ন আদালতের নথি তলব করেছেন। আগামী ৩০ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি হবে।
এর আগে সোমবার আদালতে মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার ও তার চিকিৎসার জন্য বরগুনার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর হয়। বিচারক আবেদন ফেরত দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেন। রিফাততের বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকেই।
স¤প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়। তবে মিন্নি তা অস্বীকার করে পাল্টা বলেছিলেন, দুলাল শরীফ ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায়’ পড়ে তাকে জড়িয়ে ‘বানোয়াট’ কথা বলছেন।
এ মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন ও মিন্নিসহ মোট ১৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার মূল আসামি সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।