জন্ম সনদ জালিয়াতি রোধে ‘ইলেকট্রনিক মনিটরিং’ আসছে
জন্ম নিবন্ধনের দ্বৈত সনদ নেওয়া ও জালিয়াতি ঠেকাতে ইলেকট্রনিক মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক অফিসের রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মানিক লাল বণিক বলেছেন, এ ধরনের জালিয়াতিতে জড়িতদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে জন্ম সনদ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। জাল জন্মসনদ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভুয়া জাতীয় পারিচয়পত্র ও পাসপোর্ট পাওয়ার খবরও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একটি অংশ এই চক্রে জড়িত।
রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের নিবন্ধনের তথ্য রয়েছে জন্ম নিবন্ধন ডেটাবেইজে। ২০০১ সালে হাতে লেখা নিবন্ধন সনদ চালু হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ, কাউন্সিলর অফিস থেকে নাগরিকদের এ সনদ দেওয়া শুরু হয়। ২০১০ সাল থেকে ডিজিটাইজড সনদ দেওয়া হচ্ছে।
১৭ ডিজিটের নম্বরসহ এ জন্ম সনদ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের প্রথম ধাপ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
“আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি। যেখানে এ ধরনের জালিয়াতি পাওয়া যাবে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই নিবন্ধন সনদ নেওয়া হয়, ইউপি সচিব রয়েছে । মাঠ পর্যায়ে সেখানে ইউএনও রয়েছে, ডিসি রয়েছে, তারা এসব দেখার অথরিটি; তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে, জালিয়াতি পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে।”
নিবন্ধনের কাজ সহজ করতে সফটওয়্যারের আধুনিকায়ন হচ্ছে জানিয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, “দুই তিন মাসের মধ্যে আপগ্রেডেশনের কাজ সম্পন্ন হবে। যেভাবে সফটওয়্যার আপগ্রেড করা হচ্ছে তাতে ডুপ্লিকেশনের চেষ্টা হলে সফটওয়্যার তাতে বাধা দেবে।
নোয়াখালীতে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়ে ধরা পড়েছে তিন রোহিঙ্গা
যাদের নামে দ্বৈত সনদ রয়েছে তা শনাক্তের কাজ চলছে জানিয়ে মানিক লাল বলেন, “নতুন যে সফটওয়্যার বসছে সেটা দ্বৈত নিবন্ধন ফাইন্ড আউট করতে পারবে। কত ভুল রয়েছে তা এখনই বলা যাবে না। আমরা কাজ করছি “জন্ম নিবন্ধনের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তার তদারকিতে ইলেকট্রনিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও ওই সফটওয়্যারে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেই মনিটরিং করি, ইউএনওর মাধ্যমে করি। আপগ্রেডেশনে ইলেকট্রনিক মনিটরিং সিস্টেম থাকবে। ওখান থেকেই আমরা মনিটর করতে পারব।”
মানিক লাল বণিক জানান, সার্ভারে কে লগইন করছে, কে কাকে নিবন্ধন করছে, সব বিষয়েই নজরদারির সুযোগ থাকবে নতুন সফটওয়্যারে।
“তখন কোন ইউনিয়ন পরিষদে, পৌরসভায় কতটি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে; তার মধ্যে কতটি নিবন্ধন হচ্ছে- এরকম একটি সিস্টেম থাকবে। এটাতে জালিয়াতি ধরা পড়বে। কে আবেদন করেছে, কে রিসিভ করেছে-এসব তথ্যও এর মধ্যে থেকে যাবে। তখন জালিয়াতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।”
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জে জন্ম সনদ জালিয়াতির বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, “আমরা কঠোর নির্দেশনা দিচ্ছি। যখনই অভিযোগ পাচ্ছি তখনই ব্যবস্থা নেব। …কীভাবে, কার মধ্যমে নিবন্ধিত হল তা খতিয়ে দেখব।”
তৃণমূলে গাফলাতি, স্থানীয়দের প্রভাব, আশ্রয়-প্রশয় ও অসাধু চক্রের বিষয়েও সতর্ক হওয়ার কথা জানিয়ে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, “আমরা এ নিয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছি। তারা যেন কঠোরভাবে দেখে। যেন কোনোভাবে ভুয়া নিবন্ধন হতে না পারে।”