ছোটন-সাবিনাকে বসতে না দেওয়ায় সমালোচনার ঝড়
বিষয়টা কেবল দৃষ্টিকটুই নয়, দুঃখজনকও। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে যারা দেশকে গর্বিত করেছেন, তারাই কিনা সংবাদ সম্মেলনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন পেছনে!
বুধবার রাতে বাফুফে ভবনে সাফজয়ী দলের যে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল, সেই মঞ্চে জায়গা হয়নি নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের। মঞ্চ দখল রেখে রেখেছিলেন কর্মকর্তারা।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা সামনের চেয়ারে বসেছিলেন। আর চ্যাম্পিয়ন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের পেছনে। সেখানে দাঁড়িয়েই তারা গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
যদিও সংবাদ সম্মেলনের শুরুটা হয়েছিল কোচ-অধিনায়ককে মঞ্চে বসিয়েই। পরে কর্মকর্তারা বেশি চলে এলে কোচ এবং অধিনায়ক উঠে গিয়ে তাদের জায়গা ছেড়ে দেন। তখন বাফুফে থেকে কোচ ও অধিনায়ককে মঞ্চে রাখার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
যাদের হাতে ধরে দেশ ও জাতির জন্য এসেছে গৌরবের খবর। যারা মাঠে কষ্ট করে দেশকে করেছেন সম্মানিত, সেই যোদ্ধারাই যখন পেছনের সারিতে চলে যান, সমালোচনা তো হবেই। হওয়া স্বাভাবিক।
সাফজয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেয়ে গিয়েছিল মেয়েদের প্রশংসায়। তাদেরকে কিভাবে সংবর্ধনা দেওয়া উচিত, তা নিয়ে ছিল নানা ধরনের মন্তব্য। নারী ফুটবল দল দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত যেভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে চ্যাম্পিয়ন দলকে, তা ছিল অভাবনীয়, অকল্পনীয়। সেটা নিয়ে প্রশংসা হয়েছে।
তবে তার কয়েক ঘণ্টা পরই বদলে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বাফুফের দিকেই সমালোচনার তীরগুলো। কারণ, সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক তারাই। বাফুফে পারেনি চ্যাম্পিয়ন কোচ ও অধিনায়ককে যথাযোগ্যভাবে সম্মান দিতে।
সংবাদ সম্মেলনে ছোটন ও সাবিনা কতটুকু অপমানিত হয়েছেন, সেটা বোঝা গেছে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। এমন একটা আনন্দের অনুষ্ঠানে তাদের মুখে কোনো হাসি ছিল না। তারা প্রতিটি কথা জবাব দিয়েছেন এমনভাবে, যেন ম্যাচ হেরে এসেছেন।
সাবিনা-ছোটনকে পেছনে দাঁড় করিয়ে যারা মঞ্চ দখল করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগেরই সেখানে প্রয়োজন ছিল না। ওই অনুষ্ঠানের মূল চরিত্রই থাকার কথা ছিল ছোটন-সাবিনা। তারা যেন হলেন পার্শ্ব চরিত্র। ফলে বিজয়ের আনন্দের রেশের মধ্যেই তৈরি হলো নতুন বিতর্ক।
বাংলাদেশে এটা নতুন দৃশ্য নয়। বিভিন্ন সময়েই দেখা যায়, কোনো সাফল্যের মূল কারিগর যারা, তারাই মূল্যায়িত হন না ঠিকমতো। এই যেমন বুধবার বিমানবন্দরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাফুফের কর্মকর্তারাও মালা পরে ঘুরেছেন। সেখানেও তাদের আগে আগে হাঁটতে দেখা যায়। যেন তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছেন।
এ নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে তবু একটা যুক্তি আছে, মেয়েদের গলায় মালা দিয়ে পরে তারা পরেছেন। কিন্তু বাফুফে ভবনে যেটা হয়েছে ছোটন-সাবিনার সঙ্গে, সেটা দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য।