ছাত্রী ধর্ষণ: ক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কুর্মিটোলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের’ ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
একই দাবিতে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষার্থী দুপুরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে প্রায় দেড় ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী রোববার সন্ধ্যায় শেওড়ায় তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার সময় কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পরপরই তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায় রাতে।
রাত পৌনে ১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই বিক্ষোভ শুরু হয় ক্যাম্পাসে। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিচার দাবিতে রাতে দফায় দফায় মিছিল-সমাবেশ করে বিভিন্ন সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র মো. সিফাতুল ইসলাম ভোর ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন।
সোমবার বেলা ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হতে শুরু করলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। সাড়ে ১০টায় সেখানে ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগকর্মীরা ছাড়াও ডাকসু ও হল সংসদের নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাতে যোগ দেন।
রোকেয়া হল সংসদের জিএস সায়মা আক্তার প্রমি বলেন, “আমরা এর আগেও এখানে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে দাঁড়িয়েছিলাম। আজকেও দাঁড়িয়েছি। আমরা বলতে চাই, আমরা এই ধর্ষণের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এখানে অবস্থান করব।”
এদিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতার্মীরা। সেখানে ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা সরকারেরও সমালোচনা করেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল সেখানে বলেন, “গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এটা দেশের সামগ্রিক চিত্র। এ সরকারের আমলে ধর্ষণের শিকার কোনো নারী বিচার পায়নি।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে ‘গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ বেড়েছে’ অভিযোগ করে সরকারের পতন ঘটাতে রাজপথে আন্দোলনের আহ্বান জানান শ্যামল।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে জোট বেঁধে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর গড়ে তোলা সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যর ব্যানারে কয়েকশ শিক্ষার্থী বেলা ১২টার পর ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করে এসে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেয়।
জাতীয় পতাকা, ব্যানার আর প্ল্যাকার্ড হাতে সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা স্লোগানে স্লোগানে ধর্ষণের প্রতিবাদ আর ধর্ষণকারীর বিচার চান। তাদের এই অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড় হয়ে কাঁটাবন, মৎস্য ভবন, বাংলামোটর ও টিএসসির দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা ফারুক হাসান, রাশেদ খান, ছাত্রফ্রন্ট নেতা সালমান আহমেদসহ সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের নেতারা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনে একাত্মতা জানান।
আখতার হোসেন সেখানে বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধে ‘লঘু শাস্তির’ ফলে বর্তমানে দেশে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
রাশেদ খান বলেন, “আমাদের দেশে কোনো ঘটনার পরই তথ্য-প্রমাণ গায়েব হওয়ার নজির রয়েছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এই ঘটনার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহপূর্বক দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।”
শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ কান্তা রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রশাসনকে বলব, আপনারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না, এখন বিচারটা করেন।”
গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত গতকালের ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অতি দ্রুত মামলা করা। অপরাধীকে দ্রুত ধরার জন্য প্রশাসনকেও চাপ দেওয়া উচিত।”
ধর্ষণের শিকার একজন ব্যক্তি এবং তার পরিবারকে যে দুর্বিসহ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়, সেজন্য ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিৎ বলে মত দেন এই শিক্ষার্থী।
বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে গেলে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয় বলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান।