ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে উৎসবের আমেজে নেতাকর্মীরা
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আজ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটির সম্মেলন শুরু হবে।
দুই বছর পরপর নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় চার বছর পর উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম ছাত্র সংগঠনটির সম্মেলন হচ্ছে আজ।
সম্মেলন প্রধান অতিথি থাকবেন ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। সম্মেলন ঘিরে তাদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি আর হাকিম চত্বরে আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায় শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের। শেষ মূহুর্তে নানাদিকে দৌড়ঝাঁপও করেন শীর্ষ পদের প্রার্থীরা।
ঐহিত্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির সম্মেলনকে ঘিরে গতকাল সন্ধ্যায় জমজমাট ছিল ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়। সেই সঙ্গে আশপাশের এলাকাতেও ভিড় করেন নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার সকাল হতে না হতেই নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে টিএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সোহরাওয়ার্দীতে তুলনামূলক নেতাকর্মী কম থাকলেও টিএসসি ও আশপাশের এলাকায় অনেকে আড্ডায় মেতেছেন।
সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি স্তরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রবেশ গেটগুলোতে স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা পেরিয়ে প্রবেশ করতে হবে সম্মেলন স্থলে।
এদিকে শীর্ষ নেতৃত্ব কে আসছেন তা নিয়ে শেষ মুহূর্তের জন্য চলছে জল্পনা-কল্পনা। পদ পেতে অনেকদিন ধরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পারিবারিক পরিচয়, সংকটে দলের পাশে থাকা, বিতর্কমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব পদপ্রত্যাশীদের বিবেচনায় রাখছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এসব শর্ত বিবেচনায় প্রায় দুই ডজন পদপ্রত্যাশী নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন।
শীর্ষ নেতৃত্বে আলোচনায় যারা
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে কয়েকজন শীর্ষ দুই পদে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ১৯৬৮ সালের পর সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে কেউই দুই মেয়াদে দায়িত্ব পাননি। আবার একবার সভাপতি, একবার সাধারণ সম্পাদক এমন ঘটনাও নেই।
ফলে ৫৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বা সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য যে পুননির্বাচিত হবেন না, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন- তা নিয়েই ছাত্রলীগের মধ্যে চলছে আলোচনা।
শীর্ষ দুই পদে যারা আসতে চান তাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান কমিটির কোনো পদে আছেন। কেউবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আবার কেউবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের।
শীর্ষ দুই পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শেখ মোহাম্মদ ইনান। তিনি বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার জেলা বরিশাল। একই বিভাগের সবুর খান কলিন্স বর্তমান কমিটির উপ-বিজ্ঞান সম্পাদক। তিনিও উঠে আসতে চান শীর্ষ দুই পদের কোনো একটিতে।
বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ফরিদা পারভীন ও তিলোত্তমা শিকদার। তাদের মধ্যে তিলোত্তমা বেশি সক্রিয়। তারা দুজনই ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে চান। তবে ৭৪ বছরের পুরনো এই সংগঠনে এখন পর্যন্ত শীর্ষ দুই পদে নারী নেতৃত্ব কখনোই ছিল না।
শরীয়তপুরের সন্তান মহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও ভিপি মো. শহীদুল হক শিশির। পাশের জেলা ফরিদপুরের সন্তান ফুয়াদ হাসান শাহাদাৎ। তিনি জয়-লেখক কমিটির আইন সম্পাদক। দুজনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী।
বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের, রাজশাহীর সন্তান রফিকুল ইসলাম সবুজও ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশী।
এছাড়া বর্তমান কমিটির সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন মুন্সী, বর্তমান কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মো. রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজিমুদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন, সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের আসনে বসতে চান।
কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন।
ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন একই পদের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদও চান শীর্ষ পদ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান, কর্মসংস্থান বিষয়ক উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়।
জোর আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সোহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, সহ-সম্পাদক এসএম রাকিব সিরাজী, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান ও সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন।
ছাত্রলীগের সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স সীমা থাকতে হবে, অবিবাহিত থাকতে হবে, ছাত্র হতে হবে। নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা আছে, ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন নেতৃত্ব উঠে আসুক, এটাই আমার প্রত্যাশা।