ছাত্রদলের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বয়সের সীমা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ১২ জনকে বহিষ্কারের পরদিন সহযোগী সংগঠনটির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ১৫ জুলাই ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাবেক ছাত্র দল নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল কবির খোকন ছাত্রদলের কাউন্সিল-২০১৯ এর বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে ১৫ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ হবে। তবে ভোটকেন্দ্রের স্থান এখনও ঠিক করা হয়নি।
২০০০ সাল বা তারপরে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরাই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে পারবেন। কারা ভোট দেবেন সেই তালিকা ২৪ জুন (সোমবার) প্রকাশ করা হবে। ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি ১৪ জুন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২৬ জুন, মনোনয়নপত্র বিতরণ ২৭ ও ২৮ জুন, মনোনয়নপত্র জমা ২৯ ও ৩০ জুন, প্রার্থী বাছাই ১, ২ ও ৩ জুলাই হবে।
আগামী ৪ জুলাই প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, তালিকার ওপর আপত্তি ও নিষ্পত্তি ৫ ও ৬ জুলাই এবং চূড়ান্ত তালিকা ৭ জুলাই প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীরা আগামী ১৩ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালাতে পারবেন।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ছাত্রদল এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, স্বাধীনতা রক্ষায় সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। শহীদ জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু।
ইতিহাসের প্রয়োজনে আজকে আবার ছাত্রদলকে জেগে উঠার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই কারণে আমরা নব উদ্যোমে এই সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে ছাত্রদলের আগামী দিনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাউন্সিলের উদ্যোগ নিয়েছি। কাউন্সিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে আগামী ১৫ জুলাই করব। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই ছাত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। এই ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি, যা ছাত্রদল আগামী দিনে উদ্যোগ নিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, যারা এই নির্বাচনের প্রার্থী হবেন তাদেরকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। বিবাহিতরা প্রার্থী হতে পারবেন না, তারা তো ছাত্র না। ভোট কোথায় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা (স্থান) দুই-একদিনের মধ্যে আমরা জানাব।
ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ ১২ নেতাকে বহিষ্কার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে দুদু বলেন, ২০০০ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তারা প্রার্থী হবেন। তাদের সেশন হবে ১৯৯৮ সালে রেজিস্ট্রেশন। ছাত্রদল একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠন ডাকসু, রাকসু, ইউকসুর নেতৃত্বে দিয়েছে। এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে এ সংগঠন নেতৃত্ব দেয়নি। এটা স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রধান ছাত্র সংগঠন। সেই সংগঠনের কেউ যদি নিয়ম শৃঙ্খলার বাইরে যায়, গঠনতন্ত্র মোতাবেক তারা একটা শাস্তির আওতায় আসে।
ছাত্র দলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পরে আমরা এখানে (নয়া পল্টনের কার্যালয়ে) তাদের (বিক্ষুব্ধদের) সাথে কথা বলার জন্য এসেছিলাম। সাংবাদিকরা দেখেছেন। আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পার্টির নির্দেশে এখানে কাজ করছেন, পার্টি তাকে যেটা বলতে বলে সে ততটুকু বলে। সেখানে তাকে টার্গেট করাটা সমুচিত তো নয়ই, এটা শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে না। এটা নৈতিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এটা ছাত্রদলের সাথে যায় না। এই বিষয়ে পার্টি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যথাযথ।
গত ৩ জুন বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্র দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়। এরপর আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্প্দাক নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ৩ জুন ঈদের আগের দিন রাতে ছাত্র দলের কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। তাতে বলা হয়, ২০০০ সালের পর থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাবে।
এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা গত ১০ জুন নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কার্যালয়ের ভেতরে রিজভীকেও তারা অবরুদ্ধ করে রাখে।
সর্বশেষ শনিবার সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বয়স সীমা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধরা। সকালে একটি মিছিলের জন্য নিচে নামলে তাদের তোপের মুখে পড়েন রুহুল কবির রিজভী। পরে রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ১২ জনকে বহিষ্কারের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর, রাজীব আহসানকে সভাপতি এবং আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন বিএনপি নেতৃত্ব। রাজীব-আকরামের নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠনের দীর্ঘদিন পরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হল- প্রার্থীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে, অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে এবং শুধু ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যে কোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু ও খোকন ছাড়াও আসাদুজ্জামান রিপন, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ইয়াসিন আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।