চুল বিক্রি করে দুধ কেনার খবর ‘বানোয়াট’: সাভারের ইউএনও
দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত‘চুল বিক্রি করে’ বাচ্চার জন্য এক মায়ের দুধ কেনার খবরকে ‘সাজানো ও বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে বর্ণনা করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাভারের উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। (আপডেটসহ)
বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে যে বা যারা জড়িত রয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনা একান্ত প্রয়োজন।”
মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ডজনখানেক অনলাইন, দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনে আসা ওই খবরে বলা হয়, সন্তানের খাবার কেনার অর্থ জোগাড় করতে সাভারে মাথার চুল বিক্রি করেছেন এক নারী।
এরপর বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নামে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত মাথার ‘চুল বিক্রয় করে বাচ্চার দুধ কিনলেন মা’ শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত শুরু করি। তদন্তে প্রমাণিত হয় সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট, অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
ওই ‘নিজস্ব তদন্তের’ বরাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আজ ২২-০৪-২০২০ সকাল বেলা উক্ত মহিলার সাথে কথা বলে জানা যায় যে প্রায় দেড় মাস পূর্বে তিনি তার মাথার চুল বিক্রয় করেছেন এবং সাভার এলাকায় এসেছেনও প্রায় দেড় মাস পূর্বে।
“তৎপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে করোনাকালীন দুর্যোগের জন্য অর্থকষ্টে তিনি চুল বিক্রয় করেননি। চুল বিক্রয় করে দুধ কেনার ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো এবং এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন বিভ্রান্তিমূলক।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সহকারী কমিশনার ভূমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনা শুনে সরকারের পক্ষ হতে সহযোগিতার জন্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসেন। সাংবাদিকগণ সহকারী কমিশনার ভূমি এর পুরো বক্তব্য না নিয়ে আংশিক বক্তব্য প্রকাশ করে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট যেসব সাংবাদিক বন্ধুরাই ফোন করেছেন তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অনুরোধ জানানো হয়, বস্তুনিষ্ঠ ও আসল সত্য সংবাদ পরিবেশন ও জনগণের জন্য বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী সংবাদ তুলে না ধরার জন্য (যার অডিও ক্লিপ রয়েছে)।
“উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সহকারী কমিশনার ভূমি ত্রাণ সামগ্রী ও তার ব্যক্তিগত পক্ষ হতে অর্থ প্রদান করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন যে জনৈক ওবায়দুর রহমান অভি তাকে সর্বপ্রথম ত্রাণ সহযোগিতা করেন। এরইমধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ত্রাণ সামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা করে আসেন।”
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘প্রকাশিত মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়ে শেষ করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তি।
আগের দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার নান্নু মিয়ার টিনশেড ঘরে ভাড়া থাকেন সাথী বেগম নামে ওই নারী, যার আড়াই বছর ও একবছর বয়সী দুটি সন্তান আছে।
অভাবের তাড়নায় মাস চারেক আগে ময়মনসিংহের এক গ্রাম থেকে প্রথমে রাজধানীর মিরপুরে এসে ওঠে এ পরিবারটি। দেড় মাস আগে সেখান থেকে সাভারের ব্যাংক কলোনির ওই টিনশেড বাড়িতে ওঠেন তারা।
সাথী বেগমের স্বামী মানিক মাটি কাটার কাজ করতেন; পরে রিকশা চালাতে শুরু করেন। মহামারীর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সব বন্ধ থাকায় তার রিকশা চালানোও বন্ধ।
সাথীর বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি এক হকারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়, যিনি চুল কেনাবেচার কাজ করেন। সাথীর মাথার চুল দেখে তিনি শ-চারেক টাকা মিলবে বলে আশ্বাস দেন তাকে।
তবে চুল কেটে দেওয়ার পর ‘১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সেই হকার চম্পট দেন’ এবং সেই টাকায় বাচ্চাদের জন্য দুধ, দুই কেজি চাল কেনার কথা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন সাথী।