চুকনগরের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারকে আড়াল করে দোকান ঘর নির্মাণ!
ডুমুরিয়া প্রতিনিধি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭০ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাঠে স্থাপিত শহীদ মিনারে দাড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই শহীদ মিনারকে আড়াল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় দোকান ঘর তৈরি করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সেই স্থানটি আড়াল করার প্রতিবাদ করায় রোষানলে পড়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রতাপ কুমার রায়। এদিকে বুধবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা মিলনস্থান চুকনগর। সেই চুকগরের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের মাঠে ১৯৫৩ সালে ভাষা শহীদদেও স্মরণে স্থাপপিত হয় একটি শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারটিই ডুমুরিয়া উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত সর্বপ্রথম শহীদ মিনার। ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ওই শহীদ মিনারের উপরে দাড়িয়ে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমান ভাষন দিয়েছিলেন। ওই ভাষনে যশোর জেলার কেশবপুর, সাতক্ষীরা জেলার তালা, খুলনার ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর ভাষন শোনেন। সেই শহীদ মিনারটির কোন সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে আজও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। করোনার কারণে স্কুল পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আপদকালিন এডহক কমিটি গঠণ করা হয়।
ওই কমিটির সভাপতি মনোনীত হন আওয়ামী লীগ আটলিয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ইউপি মেম্বর মোস্তাফিজুর রহমান দুলু। তিনিসহ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম শহীদ মিনারকে আড়াল করে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার উদ্যোগ নেন। শহীদ মিনারকে আড়াল করায় স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদকারীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বুধবার দুপুরে সংঘবদ্ধ হয়ে নির্মানাধীন ভবনের স্থাপনা আংশিক ভেঙ্গে ফেলে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায়ও মহীদ মিনারকে আড়াল করার প্রতিবাদ করেন। এতে রোষানলে পড়েন তিনি। তাকে নানাভাবে হেনস্থা করার এবং মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান প্রতাপ কুমার রায়।
দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে দোকান নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুলের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
স্কুল পরিচালনার এডহক কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্কুলের আয় বৃদ্ধির জন্য কমিটির সভায় দোকান নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নির্মান কাজ শেণ হলে উন্মুক্তভাবে দোকান ভাড়া বা বরাদ্দ দেয়া হবে।
আটলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন শিক্ষা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় বলেন, জাতির পিতার স্মৃতি সম্বলিত ঐতিহাসিক শহীদ মিনারকে আড়াল করে দোকান ঘর নির্মাণ করা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও ভাষঅ শহীদদের অবমূল্যায়ন করা। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সাথে যুক্তদেও শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা: সঞ্জিব দাশ বলেন, চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত ভাষা শহীদদের নির্মিত শহীদ মিনারকে অবমূল্যায়ন করে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পর্যবেক্ষন ও স্থাণীয়দের সাথে আলাপ করেছি। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়ে নির্মান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ