চীনের ফ্লাইট চালু কেন, ব্যাখ্যা দিলেন বেবিচক চেয়ারম্যান
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সব দেশের সঙ্গে আকাশ পথে যোগযোগ বন্ধ রাখা হলেও চীন পরিস্থিতি ‘সামলে ওঠায়’ এবং ‘জরুরি পণ্য পরিবহনের’ স্বার্থেই সে দেশের সঙ্গে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালু রাখা হয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমান।
শনিবার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করছিল, তখন চীনের মহামারী পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে।
“ওটাই প্রধান কারণ ছিল। আর দ্বিতীয়ত আমাদের স্বার্থের বিষয়ও আছে। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত যত সাহায্য, সেগুলো ওদিক দিয়েই আসছিল। র মেটিরিয়ালস থেকে চিকিৎসা সামগ্রী- সবই। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।”
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “তৃতীয় কারণটি হল, চীন একমাত্র দেশ যারা বাংলাদেশ থেকে বিমান চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, আমরাও দেইনি। অন্য দেশে এখন আমাদের এয়ারলাইন্স যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেজন্যই চীনের সঙ্গে এই রুটটা খোলা রাখা হয়েছে।”
গত ডিসেম্বরের শেষে চীনে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। জানুয়ারির শেষে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে বিভিন্ন দেশ ও এয়ারলাইন্স চীনের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।
এরপর এ ভাইরাস মহামারীর আকারে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে অধিকাংশ দেশের মধ্যে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করেন। ৮ মার্চ যে তিনজনের মধ্যে দেশে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে, তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন ইতালিফেরত।
এরপর রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে সরকার কড়াকড়ির আরোপের পথে যায়। কিন্তু বিদেশফেরতরা কোয়ারেন্টিনের নিয়ম ঠিকমত না মানায় দেশে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে।
মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় মার্চের শেষভাগে। কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে এখন ৭ মে পর্যন্ত সেই নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যসহ মোট ১৬টি দেশের সঙ্গে উড়োজাহাজ চলাচলে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল হয় এমন ১৭টি দেশের মধ্যে এখন শুধু চীনের সঙ্গেই প্যাসেঞ্জার ফ্লাইট চলছে।
মফিদুর রহমান বলেন, এখন চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সামনে চায়না ইস্টার্নও ফ্লাইট চলাচল শুরুর পরিকল্পনা করছে।
সপ্তাহে তিন ফ্লাইটে কত যাত্রী যাওয়া আসা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন ঢাকা থেকে চীনে খুব অল্প যাত্রী চলাচল করছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামীতে বাড়বে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ উল আহসান বলেন, চায়না সাদার্নে এ সপ্তাহে ২২১ জন এবং তার আগের দুই সপ্তাহে ২১৮ জন ও ২২৪ জন যাত্রী চীনে গেছেন।আর গত সপ্তাহে চীন থেকে ১৫ জন বাংলাদেশে এসেছেন, আগের দুই সপ্তাহে এসেছেন ২১ জন ও ২৯ জন। এছাড়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনেন্স গত দুই সপ্তাহে দুই বারে ১২ জন ও ১১ জন যাত্রী ঢাকায় এসেছেন।
তৌহিদ বলেন, করোনাভাইরাস সঙ্কটের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করত চায়না সাদার্ন। তারপর তারা সেটা কমিয়ে তিনটি করে। এখন চলছে সপ্তাহে একটা।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার জিএম মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আগে তারা প্রতিদিন চীনে একটি করে ফ্লাইট চালাতেন। এখন সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চলছে।
“চীন সরকার বিদেশি যাত্রীদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। যারা চীনে ফ্লাইট পরিচালনা করছে তাদের তারা শর্ত দিয়ে রেখেছে, এয়ারক্রাফটের আসন সংখ্যার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ যাত্রী বহন করা যাবে। তাছাড়া যাত্রীদের ওই দেশে প্রবেশের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তাদের সঙ্গে থাকতে হবে।”
এসব কারণে যাত্রী সংখ্যা কম জানিয়ে কামরুল বলেন, “বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের এয়ারক্রাফটে আগে যেখানে প্রতিদিন ১৬৪ জন যাত্রী যেতে পারত এখন প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১২৩ জন যাত্রী বহনের সুযোগ আছে।”
যারা এখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসছেন, সংক্রমণ এড়াতে তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের হেলথ সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, যারা চীন থেকে হেলথ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। আর যাদের সেই সার্টিফিকেট থাকে না, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কেয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
পরিস্থিতির উন্নতি হলে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, সেজন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও এয়ারপোর্টগুলোকে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।
“তবে এটা নির্ভর করবে আমাদের সার্বিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর। সরকারের যে নির্দেশনা আমরা পাব, সে অনুযায়ী আমরা এটা খোলার চিন্তা ভাবনা করব।”
কোন কোন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করার সুযোগ আছে সে বিষয়ে আলোচনা করতে রোববার বৈঠক করার কথা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের।
মফিদুর রহমান বলেন, “যতগুলো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে কাজ করে, যারা বিদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে, তাদের সাথে এটা নিয়ে কাল কথা হবে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”