November 23, 2024
আন্তর্জাতিক

চীনের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন

বিশ্বজুড়ে চীনের আগ্রাসী তৎপরতার প্রতিফলন ভারত-চীন সীমান্তে ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকানোর জন্য দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের দ্বন্দ্বের মধ্যে গত ১৫ জুন লাদাখে সেনা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সদস্য হতাহত হয়। ভারত তাদের ২০ সেনা সদস্যের মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও চীন কোনো সংখ্যার কথা জানায়নি। উত্তেজনা বাড়ার এক পর্যায়ে চীনের ৫৯টি বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ফোন অ্যাপসের ব্যবহার ভারতে নিষিদ্ধ করে দিল্লি সরকার।

এরপর অবশ্য লাদাখ সীমান্ত থেকে ভারত-চীন উভয় পক্ষ পিছু হটতে শুরু করে। কিন্তু এখনো ওই ইস্যুর দিকে সতর্ক নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র, এমনটা জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র। তিনি জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করেন—বিশ্বজুড়ে চীনের আগ্রাসনের প্রতিফলন ঘটেছে ভারত সীমান্তে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ভারত-চীন দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় এবং সে কথা বহুবার বলেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও নিজেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বহুবার বলেছেন। গত সোমবার তিনি চীনের ব্যাপারে বলেন, ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বেইজিংয়ের ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে ওঠার ধরনটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা এমন এক চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মোকাবিলা করছি, যেটা নিজ জনগণকে দমন করতে চায় এবং প্রতিবেশীদের পীড়ন করতে চায়।

তিনি বলেন, বেইজিংয়ের আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং ব্যবস্থা নেওয়াই এসব উসকানি ঠেকানোর একমাত্র পথ।

ব্যবস্থা নেওয়া বলতে তিনি ভারতে চীনের ৫৯টি মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ করার কথা বুঝিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ওই সব অ্যাপস নিষিদ্ধ করার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওই মুখপাত্র বলেন, এসব অ্যাপস কোনো কোনো ক্ষেত্রে চীনের নজরদারির কাজে ব্যবহার করার সুযোগ ছিল। অ্যাপসগুলো নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে ভারতের সার্বভৌমত্ব জোরদার হলো।

পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মুখপাত্র চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট না হলেও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন সরকার। হংকংয়ে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নেয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমালোচনা ও হংকংবাসীর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সত্ত্বেও গত ১ জুলাই জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে চীন সরকার। পশ্চিমা সরকারগুলোর মতে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে ওই আইন বলবৎ করে চীন সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে।

চীনের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের যেসব কর্মকর্তা সেখানকার সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক উইগুর সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত এক বিলে স্বাক্ষর করে সেটাকে আইনে রূপ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এছাড়া করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য চীনকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয় নিয়েও মার্কিন কংগ্রেসে আলোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা।

এ বিষয়ে গত মার্চে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান সিনেটর জশ হ্যাওলে। ওই প্রস্তাবে মহামারির জন্য চীনকে দায়ী করা হয়েছে এবং মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত সব দেশকে চীনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ দাবির পেছনে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, মহামারির শুরুর দিনগুলোয় চীন সরকার তথ্য গোপন করার কারণে গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দাবি করে মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সরকার এরই মধ্যে চীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

চীন তথ্য গোপন করার কারণেই সময়মতো মহামারি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি, এ অভিযোগ তো আছেই, সেই সঙ্গে মহামারি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চীন আগ্রাসন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *