চীনারা ছুটি বাড়ালে পদ্মাসেতুর অগ্রগতিতে সমস্যা হতে পারে
করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি দুই মাসের বেশি প্রলম্বিত হলে পদ্মাসেতুর কাজের অগ্রগতিতে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, বর্তমানে চীনের নববর্ষ উপলক্ষে পদ্মাসেতু প্রকল্পে কর্মরত ৩৩২ জন কর্মী ছুটিতে গেছেন। সেটা প্রলম্বিত না হলে আগামী দুই মাসের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজের অগ্রগতিতে কোনো সংকট হবে না।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরপ্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নাগরিক সেবা বিষয়ক সভা শেষে তিনি একথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরপ্রধান এবং প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়েছে। আপডেট জেনেছি কোথায় কী অগ্রগতি হয়েছে। যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে সেখানে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের চলতি অর্থবছরের ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয়ভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির হার ২৬ শতাংশ আর আমাদের ছিল ২৮ শতাংশ। জানুয়ারিতে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশ। এরমধ্যে পদ্মাসেতুর অগ্রগতি ওভারঅল ৭৭ শতাংশ। প্রধান সেতুর অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত ২৩টি স্প্যান বসেছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ২৪তম স্প্যান বসবে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুতে মোট চীনা নাগরিক কাজ করেন ৯৮০ জন। এরমধ্যে নববর্ষ উপলক্ষে চীনে গেছেন ৩৩২ জন। তাদের মধ্যে ফিরে এসেছেন ৩৩ জন। এরমধ্যে ৮ জন কোয়ারেন্টাইন মুক্ত। অন্যরা কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
‘পদ্মাসেতুতে আগামী দুই মাসে যদি (চীনের) এই অচলাবস্থার অবসান হয় তাহলে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের কাজ চলতে থাকবে। যদি না এরমধ্যে ছুটি আরো প্রলম্বিত হয়। চীনের নববর্ষ উপলক্ষে ছুটিতে গেছেন। সেটা প্রলম্বিত না হলে আগামী দুই মাসের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজে অগ্রগতিতে কোনো সংকট হবে না।’
চীনা নাগরিকদের ছুটি বিলম্বিত হলে পদ্মাসেতুতে কী রকম প্রভাব পড়বে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক দুই মাস হলে কোনো সমস্যা হবে না।
বিকল্প ব্যবস্থা বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের সঙ্গে চুক্তি তাদের সঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়নি। মাস দুই-একের মধ্যে অসুবিধা হবে না। আমাদের স্প্যানতো বসছে। ২৩টি বসেছে ২৪ নম্বরটা বসবে আগামী ১০ তারিখে। কাজেই তাদের অনুপস্থিতি তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যা হলে আড়াই তিন মাস পরে হতে পারে।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর কাজ চলছে৷ কোনো ধরনের অসুবিধা না হলে জুলাইয়ের মধ্যে সব কয়টি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের মধ্যে আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে পদ্মাসেতুতে।
কাদের বলেন, আমরা আশা করছি আগামী মাসে ঢাকা-মাওয়া বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেস ওয়ের শুভ উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সামারি পাঠানো হয়েছে। তিনি যখন সময় দেবেন তখন উদ্বোধন করা হবে। অ্যাপ্রোসের কাজ শেষ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ। পদ্মার ওপার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত উদ্বোধন হয়ে গেছে।
উড়াল সেতুর অগ্রগতি নিয়ে কাদের বলেন, এখানে ফান্ড সমস্যা এখন আর নেই। প্রথম ফেজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। এখানে চায়নিজ আছেন ২০ জন, ছুটিতে আছেন ১৮ জন এবং মোট কর্মরত ৩৮ জন। এখানে আপডেট হচ্ছে ছুটিতে থাকা চায়নিজদের জন্য কোনো অসুবিধা হচ্ছে না বা হবে না।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে ৭২ জন চীনার মধ্যে একজন ছুটিতে রয়েছেন। এখানে সেতু বিভাগের অংশে অগ্রগতি ২০ শতাংশ বলে জানান মন্ত্রী।
মেট্রোরেল সার্বিক অগ্রগতি ৪২ শতাংশ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও ৬৮ শতাংশ এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে কাজ ৩৬ শতাংশ হয়েছে। এখানে চীনা নাগরিক আছেন ৫৮ জন, চীনে গেছেন ৩১ জন, ফেরত এসেছেন ১ জন। তিনি কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এখানে কোনো ইমপ্যাক্ট পড়বে না।
ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, যে সব ঠিকাদার সময়মতো কাজ শেষ করবে না অথবা কাজ শুরু করতে গড়িমসি করে ধীরে করবে তাদের ফাইনাল নোটিশ দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনবোধে তাদের ব্ল্যাকলিস্ট করতে হবে। আগামী বর্ষার আগে চলমান যে কাজগুলো আছে তারমধ্যে সব রাস্তা ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।