চিত্রনায়ক সালমান শাহর ‘আত্মহত্যার’ প্রতিবেদন জমা হল আদালতে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়েছে, যাতে এই চিত্রতারকার মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা উল্লেখ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সালমান শাহর মৃত্যুর পর দুই যুগ ধরে তা রহস্য হয়েই ছিল।
সিআইডির পর বিচার বিভাগীয় তদন্তে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও তা মানছিলেন না সালমান শাহর পরিবার; হত্যার অভিযোগ তুলে তাতেই অটল ছিলেন তারা। তাদের আবেদনে আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে মঙ্গলবার জমা দেয়। তবে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সোমবারই সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছিলেন পিবিআই কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। আদালতের নন-জিআর শাখার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আনিছুর রহমান জানান, বুধবার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহর আদালতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।
এই মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সবশেষ গত ২ ফেব্রæয়ারি ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ। তার এক মাস আগেই প্রতিবেদনটি দাখিল করল পিবিআই। তবে এসআই আনিছুর রহমান জানান, প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে নির্ধারিত তারিখেই (৩০ মার্চ) শুনানি হবে।
পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সালমানের মা নীলা চৌধুরীর বক্তব্য না পাওয়া গেলেও বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেছেন, প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট নই। এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আমরা নারাজি আবেদন দাখিল করব।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। তখন একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি।
তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাÐের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন।
সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।
সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
মামলাটি এরপর তদন্ত করে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েস র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর তারা প্রতিবেদন দিল।