November 27, 2024
আঞ্চলিক

চিতলমারীতে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও শিশু হত্যায় তোলপাড় : মামলা দায়ের, আটক নেই

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর বাগেরহাটের চিতলমারীর অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী কুমারী মায়ের নবজাতক সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরী ধর্ষণ ও শিশু হত্যার এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এই রিপোর্ট লেখাকালীন কোন আসামী আটক হয়নি। মারাত্মক অসুস্থ্য ওই ছাত্রীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা চলছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নবজাতকের লাশ উদ্ধারকালে বাগেরহাট জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের পক্ষে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ মারুফুল আলম, সিভিল সার্জনের পক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মামুন হাসান মিলন, থানার পুলিশ পরিদর্শক মীর শরিফুল হক, সংশ্লিষ্ট শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান কাকা মিয়াসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসিরা  জানিয়েছেন ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই জনের বাড়ি তালাবদ্ধ রয়েছে।

ছাত্রীর বাবা জানান, প্রায় ছয় মাস আগে প্রতিবেশী সাধন সরকার ও দিপঙ্কর বিশ্বাস তার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে ক্রমান্বয়ে ধর্ষণ করে। মেয়ে বিষয়টি গোপন রাখে। সে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা হয়ে পড়লেও তারা তা বুঝতে পারেনি। গত রবিবার সাধন সরকার, দিপঙ্করসহ কয়েকজন তার মেয়েকে নিয়ে গোপালগঞ্জ বেড়াতে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসলে দেখে মেয়ে অসুস্থ্য। কারণ জানতে চাইলে মেয়ে মা-বাবার কাছে ঘটনা খুলে বলে।

ছাত্রীর বাবা আরো অভিযোগ করেন, সাধন সরকার ও দিপঙ্কর বিশ্বাস ছাত্রীর পরিবারকে ভয় দেখিয়ে গর্ভপাত ঘটানো প্রায় পাঁচ মাস বয়সী ছেলেকে তাদের বাড়ির উঠোনের পাশে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। এদিকে, মেয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সাধন সরকার চিতলমারী উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বড়বাক গ্রামের রবীন সরকারের ছেলে ও দিপঙ্কর বিশ্বাস একই গ্রামের বিজয় বিশ্বাসের ছেলে। বিবাহিত সাধন সরকার ও দিপঙ্কর বিশ্বাস বিবাহিত। তাদের একটি করে সন্তান রয়েছে। পেশায় তারা দুজনই নির্মাণ শ্রমিক।

ছাত্রীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যারা আমার মেয়ের জীবনটা যারা সর্বনাশ করেছে তাদের শাস্তি চাই।’

বড়বাক গ্রামের গ্রাম প্রধান শেলৈন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, ‘মেয়েটিকে অন্তঃসত্ত¡ার পর বাচ্চাটিকে পাঁচ মাস বয়সেই মেরে ফেলার মত ঘূণ্য কাজের বিচার চাই।’

শিবপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ অহিদ শেখ বলেন, ‘ওসি স্যারের নির্দেশে ও শিশুর লাশটির পাহারায় আছি।’

স্থানীয় শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামান কাকা মিয়া বলেন, ‘সাধন ও দিপঙ্কর যে খারাপ ঘটনা ঘটিয়েছে তার এমন শাস্তি হওয়া উচিৎ যাতে আর কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করার সাহস না পায়।’

ত্রিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ কামরুজ্জামান খান পিকলু জানান, তাদের বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর ওপর অত্যাচার করে ওরা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিৎ।

চিতলমারী থানার পুলিশ পরিদর্শক মীর শরিফুল হক সাংবাদিকদের জানান, ওই কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-১। আসামী আটকের চেষ্টা চলছে।

চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পবিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মামুন হাসান মিলন জানান, চিকিৎসায় ওই ছাত্রীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা ও ময়না তদন্তের জন্য নবজাতকের মৃতদেহ মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে অসুস্থ্য ছাত্রীর চিকিৎসার খোঁজ নেয়া হচ্ছে। প্রকৃত দোষী আইনের যথাযথ শাস্তি পাক-এটা আমরা চাই।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *