November 26, 2024
জাতীয়

চিকিৎসাই এখন খালেদা জিয়ার প্রধান লক্ষ্য

আপাতত রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার এখন মূল লক্ষ্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া।

আর পরিবারের সদস্যদেরও একই চাওয়া। আপন বলতে এক বোন আর এক ভাই জীবিত আছেন খালেদা জিয়ার। তারাই সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে মুক্ত করেছেন খালেদা জিয়াকে। সুতরাং তারা চাচ্ছেন না সরকারের শর্ত ভঙ্গ করে খালেদা জিয়া আবার কারাগারে যাক। সেজন্য তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারের নিয়মের মধ্যে থেকে বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হোক।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া নিজেও আপাতত রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাচ্ছেন না।

গত ২৫ মার্চ মুক্তির পর সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতি দেননি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এমনকি দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে দেখাও করেননি। ঐক্যফ্রন্ট ও ২০দলীয় জোটের ২৬টি দলের মধ্যে শুধু নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না একবার সাক্ষাৎ পেয়েছেন। ২০দলীয় জোটের নেতারা সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করলেও কেউ পাননি। এতে বোঝা যাচ্ছে, তিনি রাজনীতির চেয়ে চিকিৎসাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ার পরের দিন ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান। ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পেলেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখনও তারেক রহমানই আছেন। গত চার মাসে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকেও সভাপতিত্ব করছেন তারেক রহমান। এ থেকেই বোঝা যায়, রাজনীতির প্রতি ততটা আগ্রহ নেই খালেদা জিয়ার। এমনকি ঈদের দিন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে খালেদা জিয়া দেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন, কয়েকটি পত্রিকায় এমন সংবাদ প্রকাশ হলেও দলের পক্ষ থেকে তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলীয় নেতাদের সাথে কুশল বিনিময় ছাড়া কোনো কথা হয়নি খালেদা জিয়ার।

আইনজীবী ও চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। একদিকে করোনা অন্য দিকে শারীরিক অসুস্থার কারণে আপাতত রাজনীর মাঠে দেখা যাবে না চেয়ারপারসনকে। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যেতে হবে। সেজন্য শিগগিরই আবেদনও করা হতে পারে।

ঈদের পরের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। বিদেশে তার হাঁটু রিপ্লেস করা হয়েছিল। সেখানে সারাক্ষণ ব্যথা থাকে। সেজন্য চিকিৎসা নিতে তার বিদেশে যেতে হবে।

পারিবারিক সূত্র বলছে, সরকারের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠাতে চাচ্ছেন তারাও। সেক্ষেত্রে সরকারও নমনীয়তা দেখিয়ে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এজন্য সরকারের উচ্চ মহলে দেনদরবারও করছেন। প্রয়োজনে তারা আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হতে পারেন।

একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নিজে যদি বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন তাহলে সেই আবেদন মনজুর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ৬ মাস শেষ হওয়ার আগেই যদি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়াকে) সরকার মুক্তি দিয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে। এখন চিকিৎসাই যদি না হয় তাহলে তার মুক্তি নিরর্থক হয়ে যাবে। তার যে অসুস্থতা সেটার জন্য তিনি বহুবার বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাংলাদেশের হাসপাতালে দীর্ঘদিন থাকার পরও তিনি সুস্থ হননি। সেজন্য তার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, সরকার যেহেতু তাকে অসুস্থতার জন্য মুক্তি দিয়েছে, সেহেতু আশা করি বিদেশে চিকিৎসার আবেদনেও নমনীয় হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *