চিকিৎসকদের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের অযৌক্তিক আচরণ বন্ধে নোটিশ
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বাড়িওয়ালাদের অযৌক্তিক ও অমানবিক আচরণ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক মো. ওবায়দুর রহমানের পক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ইমেইলে স্বাস্থ্য সচিব, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ এবং প্রয়োজনে অ্যাডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
নোটিশ প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্ট বিভাগে নির্দেশনা চেয়ে রিট করার কথা জানান আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলস চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে বর্তমানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই নিরলস চিকিৎসাসেবার কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক রোগ, তাই পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকার কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার এই ঝুঁকি নিয়ে যেখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলস চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে, একদল বাড়িওয়ালা বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার মতো অযৌক্তিক এবং অমানবিক নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার পর্যন্ত করছেন যা তাদের মানসিকভাবে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ প্রাণঘাতী করোনার এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে নিরলস চিকিৎসাসেবা পেতে হলে তাদের মানসিকভাবে নির্ভার রাখাটা অত্যন্ত জরুরি’ বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রামক রোগ হওয়ায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) অত্যন্ত জরুরি। গত ২২ মার্চ চিকিৎসক ও নার্সদের দ্রুত পিপিই দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। তারপরও পর্যাপ্ত পিপিই না থাকার কারণে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে ওই আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংস্পর্শে আসা অন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গত ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম একজন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেন। সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমার আওতায় আনার কথা বললেও তা কোন আইন বা নীতিমালার অধীন কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এখন পর্যন্ত কেউ জানে না। তাই এক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।
পত্রপত্রিকা থেকে তথ্যের উল্লেখ করে নোটিশে আরও বলা হয়, আমাদের দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক পর্যাপ্ত নেই। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করে করোনার প্রাণঘাতী ছোবল থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।’