চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকেলে চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই আশ্বাস দেন তিনি।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৌলভীবাজারের পাত্রখোলা চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। তাকে স্বাগত জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
পাত্রখোলা চা বাগানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
চা শ্রমিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আপনাদের নাগরিকত্ব দিয়েছেন আর আমি আপনাদের ঘর করে দেব। চা বাগান হলো দেশের সৌন্দর্য। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, চা শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বঙ্গবন্ধু প্রথম চা শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় তিনি চা শ্রমিক ও চা শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মধ্যেমে চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করেন। আওয়ামী সরকারের আমলে চা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পঞ্চগড়ে চা বাগান তৈরি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা শ্রমিকরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যেন কষ্ট না থাকে সে জন্য আমরা অন্য, বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছি।
ভিডিও কনফারেন্সে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শ্রমিকরা।
অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চণ্ডীছড়া চা-বাগানের খেলার মাঠ থেকে জেলার ২৪টি চা-বাগানের শ্রমিকরাও ভিডিওকলে অংশ নেন। এছাড়া মৌলভীবাজার থেকে ভিডিওকলে অংশ নিয়েছেন ৯২টি চা-বাগানের শ্রমিকরা। এছাড়া সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকেও ভিডিওকলে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা।
গত ৯ আগস্ট থেকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেন তারা। এর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি।
চার দিন পর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন চা শ্রমিকরা। ধর্মঘটের ৮ দিনের মাথায় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বিভাগীয় শ্রম দফতরের কার্যালয়ে শ্রম অধিফতর ও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা।
বৈঠকে শ্রমিকদের মজুরি ২৫ টাকা বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়। এমন আশ্বাসের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়ার কথা জানান শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সন্ধ্যার পর ফের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চা-শ্রমিক নেতারা।
এরপর ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
মজুরি বাড়ানো ঘোষণার পরদিন ২৮ আগস্ট রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় কয়েকটি চা বাগান এবং ২৯ আগস্ট, সোমবার সকাল থেকে চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।