চাকরির অবসান হলেও পাওনার হিসাব জানে না অধিকাংশ পাটকল শ্রমিক
খুলনা অঞ্চলে পাওনা পরিশোধ শুরু ১৯ অক্টোবর
জয়নাল ফরাজী
খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের চাকরি অবসান প্রায় ৪ মাস হলেও এখন পর্যন্ত কোন হিসাব দেয়নি মিল কর্তৃপক্ষ। কৌশলে শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে কেউ কেউ মৌখিকভাবে জানতে পরলেও অধিকাংশ শ্রমিক তাদের পাওনা দেনার হিসাব জানেনা। মিল কর্তৃপক্ষ হিসাবে নানা গড়মিল করার অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা। এদিকে আগামী সোমবার (১৯ অক্টোবর) থেকে প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রউফ।
খুলনার প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের ২নং ইউনিটের রোল ওয়েন্ডিংয়ের শ্রমিক মোঃ ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করেন, মিল কর্তৃপক্ষ হিসাব গড়মিল করায় সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানায়নি।
১নং মিলের ফিনিশিং বিভাগের ইদ্রিস আলী জানান, হিসাবের চার্ট দেওয়ার কথা বললেও কর্তৃপক্ষ কোন চার্ট টানায়নি।
এদিকে ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকৌশল বিভাগের শ্রমিক আবু জাফর জানান, হিসাব বিশেষ কৌশলে জেনেছি। তবে অসংখ্য ভুলে ভরা হিসাব বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তাকে ইনক্রিমেন্ট যথাযথ দেওয়া হয়নি। সঠিক হিসাব হলে তিনি আরো কয়েক লক্ষ টাকা পেতেন। এভাবে অধিকাংশ শ্রমিকদের হিসাবে ঠকানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার মোট পাওনার পরিমাণ ২৩ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা প্রায় বলে জানতে পেরেছেন।
অবসায়নকৃত শ্রমিকদের ২০ খাতে হিসাবে গড়মিল করছে বলে সিবিএ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে তারা লিখিতভাবে শ্রমিকদের হিসাবে ঠকানো বিষয়গুলো চিহ্নিত করে পাট মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দিয়েছেন বলে জানান ক্রিসেন্ট জুটমিলের সাধারণ সম্পাদক মাওঃ হেমায়েত উদ্দীন আজাদী।
তিনি জানান, ঘর ভাড়া, ১ ও ২ জুলাইয়ের মজুরী, ১ জুলাইয়ের ইনক্রিমেন্ট, গ্রাচ্যুইটির পরিমাণ নির্ধারণ, পুন:বহালকৃত শ্রমিকদের গ্রাচ্যুইটি প্রদান, গ্রাচ্যুইটির টাকার হিসাবে অনিয়ম, এরিয়ার হিসাবে অনিয়ম, অতিরিক্ত কাজের এরিয়ার হিসাব করছে না, ৩০% ইনক্রিমেন্ট দেয়নি, অডিট আপত্তি নিরসন করেনি, মামলা নিমস্পত্তি প্রয়োজন, বৈশাখী ভাতা কম দিয়েছে, নোটিশ পে এর মজুরী কম দিয়েছে, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর, জাতীয়, কেএফটিসহ ৫টি মিলের এরিয়ার হিসাব হচ্ছেনা, বকেয়া সাপ্তাহিক মজুরী ২০১৯ দেয়নি, সাধারণ ছুটির মজুরী কম দিয়েছে, পিএফএর লভাংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের হারে দেয়নি।
শ্রমিকদের অফিসিয়ালি হিসাব না দেওয়া, হিসাবে গড়মিল করা বিষয়ে প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. গোলাম রব্বানী জানান, হিসাব বিজেএমসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে চেক দেওয়ার সময় হিসাব জানানো হবে।
হিসাবে গড়মিল করার বিষয়ে ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান খান মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকদের হিসাবের বিষয়ে বিজেএমসি’র অঞ্চলভিত্তিক টিম এর তদারকি এবং বিভিন্ন চিঠির আলোকে করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের আপত্তির বিষয়গুলো যথাযথভাবে করা হয়েছে। তবে তার মিলের পাওনার চেক এ মাসের শেষের দিকে দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, দেশের বর্তমান সবচেয়ে বড় পাটকল ক্রিসেন্ট জুট মিলের অবসায়নকৃত শ্রমিক ২৭৭২ জন। তাদের পাওনার পরিমাণ ৩১২ কোটি ৫ লক্ষ টাকা প্রায়, অবসরপ্রাপ্ত ১৫৩০ জন শ্রমিকের পাওনা ১০৮ কোটি ৬ লক্ষ টাকা প্রায়, বদলী (অস্থায়ী) ৬৬৫৪ জন শ্রমিকের পাওনা ৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রায়। এ মিলের অবসান, অবসর এবং বদলী শ্রমিকদের মোট পাওনার হিসাব হয়েছে ৪৫৮ কোটি ১০লাখ ৭৬ হাজার টাকা প্রায়।
শ্রমিকদের হিসাবে গড়মিল বিষয়ে বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, কোন শ্রমিককে একটি টাকা কম দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ হিসাব করার জন্য বিজেএমসি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের টিম সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে হিসাব করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে লতিফ বাওয়ানীসহ চট্টগ্রামের একটি মিলের টাকা প্রদান করা হয়েছে। আগামী সোমবার প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলের চেক হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে ক্রিসেন্ট ও রাজশাহী জুট মিলের হিসাব অর্থ মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করেছে। প্লাটিনামের পর ক্রিসেন্ট, কাপের্টি এবং রাজশাহী জুটমিলের অবসায়ন, অবসরকৃত শ্রমিকরা তাদের পাওনার চেক দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব মিলের শ্রমিকরা তাদের সকল পাওনা পাবেন বলেও তিনি জানান।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ