চাঁদাবাজির জেরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, প্রতিপক্ষের দাবি গণপিটুনি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী বাজার ও রেলওয়ে কলোনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং চাঁদাবাজির জের ধরে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অন্য পক্ষ বলছে, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
গতকাল সোমবার নগরের ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মহিউদ্দিন সোহেল চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মিলারচর গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন নগরের খুলশী আবাসিক এলাকায়। তার বাবা রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী।
মহিউদ্দিন সোহেল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ- শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক। এ ঘটনায় দু’জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন- মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ওসমান খান ও মহিউদ্দিন সোহেলের অনুসারী রাসেল দে।
এ প্রসঙ্গে ডবলমুরিং থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ব্যবসায়ীরা বাজারের দোকানপাট বন্ধ রেখে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এরপর সেখান থেকে মহিউদ্দিন সোহেল, রাসেল ও ওসমান খান নামের তিনজনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা মহিউদ্দিন সোহেল ও রাসেলকে পিটুনি দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মহিউদ্দিন সোহেল, ওসমান খান ও রাসেল দেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে মহিউদ্দিন সোহেলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাহাড়তলী রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনি ও পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল বাজারের ব্যবসায়ী মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক ওসমান খানের। বছর খানেক ধরে রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনির দু’টি স্টাফ কোয়ার্টার দখল করে কার্যালয় খুলে বসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল। নাম দেন ‘এম এন কম্পাউন্ড’। সেখানে বসে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তার অনুসারীরা বাজারে আসা পণ্যবাহী গাড়ি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সোমবার সকালে পাহাড়তলী রেলওয়ে পাওয়ার হাউস গেটে ওসমান খানের সঙ্গে মহিউদ্দিন সোহেলের লোকজনের বাক বিতন্ডতায় হয়। এক পর্যায়ে ওসমান খানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সোহেলের অনুসারীরা। তারা তার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ওসমান খানের লোকজন ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে সোহেলের অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মহিউদ্দিন সোহেলকে কুপিয়ে ও মারধর করে হত্যা করে তারা। তার কার্যালয়টিতে ভাংচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখে।
মহিউদ্দিন সোহেলের ভাই মো. শিশির বলেন, পাহাড়তলী রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জুয়া ও অসামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল ওসমান খানের অনুসারীরা। এসব বন্ধ করে দিয়েছিল সোহেল। এর জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে আহত বাজারের ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির নেতা ওসমান খান বলেন, সকালে রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনির গেট দু’টি বন্ধ করে দেয় মহিউদ্দিন সোহেল। ফলে কলোনির লোকজন বাজারে আসা-যাওয়া করতে পারছিল না। আমি এর প্রতিবাদ করলে তার ছেলেরা এসে কিরিচ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এরপর বাজারের ব্যবসায়ীরা জড়ো হয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়েছে।
পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক ও সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আহমদ বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মহিউদ্দিন সোহেলের কোনো ঝামেলা হয়নি। বাজারের মুদি দোকানি ওসমান খানের সঙ্গে তার ঝামেলা সৃষ্টি হয়। কলোনিতে আগে জুয়া বসতো। এসব নিয়ন্ত্রণ করতো ওসমান। এখন মহিউদ্দিন সোহেল এসব নিয়ন্ত্রণ করে বলে শুনেছি। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও মহিউদ্দিন চাঁদাবাজি করতো বলে শুনেছি। তবে কখনো কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেনি।
তবে পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সোহেল ও তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে বাজারে আসা মালবাহী প্রতিটি ট্রাক থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছিল। গত রোববার সোহেল ঘোষণা দেয়, সোমবার থেকে গাড়ি প্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে।
বাজারটির ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজারের পাশে রেলওয়ের দু’টি স্টাফ কোয়ার্টার মহিউদ্দিন সোহেল দখল করে রেখেছিল। সেখানে বসে তার অনুসারী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করত সোহেল। লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়েছে।
বাজারের মো. রুবেল নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, সন্ত্রাসীদের দিয়ে বাজারের দোকানদার-শ্রমিকদের ডেকে নিজের অফিসে নিয়ে যেত সোহেল। সেখানে পকেটের মধ্যে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করত। বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মো. হান্নান বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা চেয়ে ফোন করতো সোহেল। কেউ দিতে না চাইলে তাকে অফিসে ধরে নিয়ে মারধর করত। ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট হয়ে তাকে গণপিটুনি দিয়েছে।